“এটাই পরলোক যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধ্যত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়। শুভ পরিণাম সাবধানীদের জন্যই নির্ধারিত।” (সূরা ঃ কাসাস ঃ আয়াত ঃ ৮৩)
“ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না। তুমি তো কখনোই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না।” (সূরা ঃ বনী ইসরাঈল ঃ আয়াত ঃ ৩৭)
“মানুষের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে কথা বলোনা। আর যমীনের ওপর অহঙ্কার করে চলাফেরা করো না। মহান আলাহ কোন আত্মঅহংকারী দাম্ভিক মানুষকে পছন্দ করেন না।” (সূরা ঃ লোকমান ঃ আয়াত ঃ ১৮)
১. হযরত আবদুলাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। একজন লোক বলল, কোন কোন লোক চায়, তার কাপড়টা সুন্দর হোক, জুতাটা আকর্ষণীয় হোক এটাও কি খারাপ? তিনি বললেন, মহান আলাহ তা’আলা সুন্দর। তিনি সবসময় সৌন্দর্য পছন্দ করেন, এটা অহংকারের অন্তর্গত নয়, অহংকার হল- গর্ব করে সত্যকে অস্বীকার করা ও লোকদের হেয় জ্ঞান করা। (মুসলিম শরীফ)
২. হযরত হারিসা ইবনে ওহাব রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, আমি রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, আমি কি তোমাদের দোযখবাসীর বিষয়ে জানাব না? তারা হলো, প্রত্যেক অহংকারী সীমালংঘনকারী। বদবখ্ত ও উদ্ধত্য লোক। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, মহান আলাহ কিয়ামতের দিন তিন ধরনের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্রও করবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেনও না। আর তাদের জন্য রয়েছে, বেদনাদায়ক শাস্তি, তারা হল ঃ (১) বৃদ্ধ যিনাকারী, (২) মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও (৩) অহংকারী দরিদ্র। (মুসলিম শরীফ)
৪. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন মহান আলাহ তা’আলা ঐ লোকের প্রতি ফিরে তাকাবেন না। যে অহংকার বশতঃ তার লুঙ্গি পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিয়েছিল। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৫. হযরত সালমা ইবনে আকওয়া রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, কোন লোক সবসময় নিজেকে লোকজন হতে দুরে রাখতে থাকে এবং অহংকার করতে থাকে অবশেষে তার নাম অহংকারী ও উদ্ধতদের সঙ্গে লিখে দেয়া হয়। এরপর তার ওপর ঐ মুসিবতই পতিত হয়। যা অহংকারী ও উদ্ধত লোকজনের প্রতি পতিত হয়ে থাকে। (তিরমিযী শরীফ)
৬. হযরত সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর কাছে বসে বাম হাতে খানা খেল। রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন, ডান হাতে খানা খাও। সে বলল, আমি তো খেতে পারছি না। রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন, তুমি যেন না-ই পার। অহংকারই তার হুকুম তামিলের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়িয়েছিল। যাই হোক, তার পরিণাম এই দাড়িয়েছিল যে, সে আর মুখ পর্যন্ত হাত তুলতে পারেনি। (মুসলিম শরীফ)
৭. হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, বেহেশত ও দোযখের মাঝে একবার তর্ক বিতর্ক হল। দোযখ বলল, যারা অহংকারী উদ্ধত তারাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। বেহেশত বলল, যারা দুর্বল মিসকীন অসহায় লোকজন আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। মহান আলাহ তা’আল দু’য়ের মধ্যে ফায়সালা করে দিলেন এবং বললেন, বেহেশত তুমি আমার রহমত। যে বান্দার প্রতি মহান আলাহর রহম করার ইচ্ছা হবে। তোমার সাহায্যে আমি তার প্রতি রহম করব। আর দোযখ তুমি হচ্ছো আমার আযাব ও শাস্তি। যাকে আমি ইচ্ছা করব তোমার মাধ্যমে শাস্তি দেব। বলাবাহুল্য তোমাদের উভয়কে পূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। (মুসলিম শরীফ)
৮. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, মহান আলাহ তা’আলা বলেন, ইজ্জত ও মহাত্ম হচ্ছে আমার ভূষণ। অহঙ্কার ও শ্রেষ্ঠত্ব আমার একমাত্র চাদর। যে এ দু’টির কোন একটিতেও আমার সঙ্গে সংঘর্ষ ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে তাকে আমি শাস্তি দিব। (মুসলিম শরীফ)
৯. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, অতীতকালের কোন এক লোক অতি মূল্যবান পোশাক পরিধান করে হেটে যাচ্ছিল। এতে সে নিজেকে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত অনুভব করছিল। মাথায় বা চুলে সিথি কেটে ও চাল-চলনে অহংকারী ভাব প্রকাশ করে চলছিল। মহাপরাক্রমশালী আলাহ্ হঠাৎ তাকে মাটির নিচে দাবিয়ে দিলেন। কিয়ামত পর্যন্ত যে যমীনের নিচে তলিয়ে যেতে থাকবে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
Leave a Reply