বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীতে মাদ্রাসা ছাত্রের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, মোবাইলে গেইম খেলা নিয়ে দুই বন্ধুর ‘মারামারিতে’ তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর ওই বন্ধু মাকে সাথে নিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করে। গ্রেপ্তাররা হলেন- হাফিসা বেগম (৩৬) ও তার ১৫ বছর বয়েসী ছেলে মো. হাসান। হাফিসা শহরের এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন, তার ছেলে শহরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র। ছেলেকে নিয়ে হাফিসা থাকেন নগরীর ইপিজেড থানার আয়েশার মার গলি এলাকায়।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) আলী হোসেন জানান, ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানা থেকে হাফিসা বেগমকে পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে আনোয়ারা উপজেলা থেকে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার নিখোঁজের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়েশার মার গলি এলাকা থেকে এক মাদ্রাসাছাত্রের লাশ উদ্ধার করে। ওই ছাত্র নিখোঁজের পর তাকে ফিরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করা হয়েছিল তার পরিবারের কাছে।
যে নম্বর থেকে ফোন করে তার বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল, ওই নম্বরের সূত্র ধরেই মা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশের উপ-কমিশনার আলী হোসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর ও তার মা মোবাইলে গেইম খেলা নিয়ে মারামারিতে আবদুল্লাহর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
নিহত মাদ্রাসাছাত্র ঝালকাঠির মঠবাড়িয়া উপজেলায় নানার বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। ছুটিতে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে বাবা-মার কাছে এসেছিল। তার নানা বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল শুক্রবার।
তারা বাবা ও মা দুজনেই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আলী শাহ মসজিদ মাজার গলিতে তাদের বাসা।
হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা আলী হোসেন জানান, “দুই কিশোর বন্ধু। নিহত কিশোর বর্তমানে মঠবাড়িয়ার মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও আগে দুজনে চট্টগ্রামে একটি মাদ্রাসায় একসঙ্গে পড়ত। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
“গত বুধবার কিশোর আবদুল্লাহ গ্রেপ্তার কিশোর হাসানের বাসায় যায়। সেখানে দুই বন্ধু মিলে মোবাইলে ‘ফ্রি-ফায়ার’ গেইম খেলে। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতিও লেগে যায়। সে সময় গ্রেপ্তার কিশোর ঘুষি মারলে তা নিহত কিশোরের কণ্ঠনালীতে লাগে। এতে সে ছটফট করতে করতে পানি চাইলে তার বন্ধু পানিও খাওয়ায়। তার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে বন্ধু প্রতিবেশি এক তরুণকে ডাকাডাকি করলেও ওই তরুণ এগিয়ে আসেনি।
পুলিশ কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, “এক পর্যায়ে আহত কিশোর হাসান নিস্তেজ হয়ে গেলে গ্রেপ্তার ছেলেটি ফোন করে মা হাফিসাকে ঘটনা জানায়। হাফিসা তখন কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নিহত ছেলেটির লাশ বস্তায় ভরে ফেলেন। এরপর রাত গভীর হলে বাসার কাছেই দুই ভবনের মাঝে সরু গলিতে লাশটি ফেলে আসেন মা-ছেলে মিলে। এরপর ওই কিশোর তার খালার বাসায় আনোয়ারায় চলে যায়।”
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে গ্রেপ্তার কিশোর জানায়, তার ধারণা ছিল বন্ধুকে খুঁজতে তার বাবা-মা তাদের বাসায় আসতে পারে।
“সেজন্য সে মুক্তিপণ দাবি করে বন্ধুর বাবাকে ফোন করে ব্যস্ত রাখে, যাতে সে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে। মুক্তিপণ দাবি করে জিম্মির পরিবারকে ব্যস্ত রাখার এই কৌশলটি টেলিভিশনের সিরিয়াল দেখে শিখেছে বলেও ছেলেটি জানিয়েছে।”
মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে নিহত কিশোরের বাবা মাহমুদ হোসেন বলেন, “সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার মোবাইলে ফোন করে একজন জানায় আমার ছেলেকেচ অপহরণ করা হয়েছে। এরপর আমি ওই নম্বরে ফোন করে ছেলেকে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করলে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চায়। তখন আমি তাকে বলি যে এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। এরপরে আমাকে বলল, এটা বসের হুকুম, টাকা দিতেই হবে।”
Leave a Reply