24 Nov 2024, 07:42 pm

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বালুচরে আউশের বাম্পার ফলন ; কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীরজুড়ে তপ্ত বালুচর এখন সোনালী রংয়ের পাঁকা ধানে ভরে উঠেছে। স্হানীয় কৃষকের আবাদের ফলে বদলে গেছে সে চরের দৃশ্য। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় এই বালিচরে এবার আউশ ধানের আবাদ হয়। কৃষকের কষ্টের সেই আউশ ধান এখন পেকে সোনালী রঙ ধারণ করেছে। বর্তমানে এই বালুচরে যেদিকেই চোখ যায় সোনালী ধানের ঢেউ যে কাউকে মুগ্ধ করছে। কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে।

জানা যায়, কর্ণফুলীর চরে আবাদ করা আউশ ধানগুলো পেকে গেছে। দুয়েকদিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা হবে। হেক্টর প্রতি ফলন তিন টন পর্যন্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চরে পাখির উপদ্রব বেড়েছে। এই নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়ন দিয়ে পাড়ভাঙন রোধে মাঝনদী থেকে বালি এনে কূলে ফেললে এই বালিচরের সৃষ্টি হয়। এবার এই চরে আবাদের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ২৫ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আউশ ধান বীজ ও সার দেওয়া হয়েছিল। কৃষকরা সেখানে এসব বীজ ফলিয়ে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। যেখানে এরআগে তারা সবজিও চাষ করেছিলেন।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ধূ ধূ বালুচর এখন সোনালী ধানে দোলা খাচ্ছে। তীব্র রোধের মাঝে হালকা বাতাসে সোনালী রঙের পাঁকা ধান গাছের ঢেউ খেলানো চিত্র মুগ্ধ করছে সবাইকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিস্তৃত চরে কৃষকের আউশ ধানের আবাদ এখন কাটার উপযুক্ত হয়েছে। ভালো ফলন দেখে আশেপাশের কৃষকরাও পরেরবার চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। তবে পাখির উপদ্রবে কিছুটা চিন্তিত কৃষকরা৷ ভবিষ্যতে ৩—৪শ কানি আয়তনের এই চরের পুরোটা যদি আবাদের আওতায় আনা যায়, তবে এই উপদ্রব থাকবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেক জানান, তিনি চরের ৬ কানি (৪০ শতকে এক কানি) জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এভাবে ফলন আসবে কল্পনাও করেননি তিনি।

তিনি জানান, এক কানিতে তার খরচ হয়েছে ৫—৬ হাজার টাকা। যেখানে গুমাইবিলে খরচ হয় এর ৫—৬ গুণ বেশি। প্রতি কানিতে ৬০০—৭০০ কেজি মতো ধান হবে। কানি প্রতি ৬০০ কেজি করে ফলন হলেও কেজি ৩০ টাকা হিসেবে ১৮ হাজার টাকার ধান হবে। আরও কমের মধ্যে হলেও কানিতে অন্তত ১৫ হাজার টাকার ধান হবে। মানে ১২০ দিনে ফলন আসার পর বিনিয়োগের তিনগুণ লাভ হচ্ছে। এতে অন্যান্য কৃষকরাও আউশ আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন, আগামীতে তারাও করবেন বলে জানাচ্ছেন।

এদিন চরে ঘুরতে আসেন মো. রিয়াজ নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, বালির মধ্যেও যে ধান আবাদ করা যায়, তা এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না। ধান আবাদের ফলে নদীপাড়ে চরের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

এই ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, চরটি খালি পড়ে ছিল। তাই কৃষকদের এই চরে চাষ করার জন্য আগ্রহী করে তুলি। তাদেরকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করি। ৩—৪শ কানি আয়তনের পুরোটা যদি আবাদের আওতায় আনা যায়, তাহলে পাখির উপদ্রব কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, চরে বপণ করার সময় রোদের তীব্রতা ছিল বেশি, পানির সমস্যাও ছিল। এ জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ফলন পেতে ১০—১৫ দিন সময় বেশি লেগেছে। অন্যান্য চরে যেখানে বালি তুলে আগ্রাসন চালায়, সেখানে এই স্থানে চাষাবাদের ফলে সেই সুযোগ পাইনি, বরং আবাদযোগ্য মোট জমির পরিমাণ বেড়েছে। পাখির উপদ্রব যদি কম হতো, তাহলে তারা লাভবান আরেকটু বেশি হতো। ভবিষ্যতে এই চরের পুরোটা আবাদ হবে বলে তিনি আশা করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম এর  উপপরিচালক আবদুচ সোবহান বলেন নদী চরের অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আনতে আমরা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে স্হানীয় কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া সহ নানা ভাবে উৎসাহিত করে আসছি। যার ফলে কৃষকরা আজ পতিত চর আবাদ করে সোনালি ধান ফলিয়ে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14098
  • Total Visits: 1294996
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৭:৪২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018