April 9, 2025, 7:50 am
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ১০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতে যাওয়ার সময় নারীসহ ৪ জন আটক ঝিনাইদহের মহেশপুরে কৃষকের ৩ হাজার ড্রাগন ও ৭শ’ পেয়ারা গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে দুর্বত্তরা ঝিনাইদহের মহেশপুরে ৫বছরের ভাগ্নিকে ধর্ষনের চেষ্টা লম্পট মামা জেল হাজতে মাগুরায় বিধবা মহিলার ৩০ বছর পর জমি দখলের অভিযোগ  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন কোরিয়ার বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল বাংলা নববর্ষকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সমস্যা সমাধানে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯ : প্রেস সচিব কিশোরগঞ্জে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এইমাত্রপাওয়াঃ
আমাদের সাইটে নতুন ভার্ষনের কাজ চলছে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

চিনি নিয়ে কারসাজি করছে মিল মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা : ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চিনির বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে ৭টি কারণ চিহ্নিত করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যে পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কব্জায় চিনির বাজার তাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পেয়েছে সরকারের সংস্থাটি। মেঘনা সুগার রিফাইনারি, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, আবুল মোনেম সুগার রিফাইনারি, এস আলম সুগার রিফাইনারি ও দেশবন্ধু সুগারে বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অপরদিকে, চিনির ডিলার পাইকারি ও খুচরা বাজার তরারককালে ৫টি অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়ার কথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার। গতকাল এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে তা জানানো হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চিনি উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় চিনি নিয়ে বাজারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারী ব্যবসায়ী ও ডিলারদের কারসাজির কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে চিনি উৎপাদনকারী মিলগুলোকে বাজারে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নজরদারি করাসহ ১১ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভোক্তা অধিকারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা সুগার রিফাইনারীর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০০ মেট্রিক টন। এক দিনের তথ্য তুলে ধরে এতে বলা হয়, তারা উৎপাদন করেছে ১৯৭৪ মেট্রিক টন। মিলটিতে অভিযানকালে সাপ্লাই অর্ডারে মূল্য উল্লেখ ছিল না।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ (তীর ব্র্যান্ড চিনি) উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৫০ ভাগ কম চিনি উৎপাদন করছে। চিনির সাপ্লাই অর্ডারে ইউনিট প্রাইস উল্লেখ নেই। উৎপাদন কম হওয়ার বিষয়ে কারখানার তরফ থেকে ভোক্তা অধিকারকে কারণ হিসেবে গ্যাস সংকটের কথা জানানো হয়েছে। আবুল মোমেন সুগার মিলের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭০০ মেট্রিক টন।

উৎপাদন ও সরবরাহ করছে ৬৮৫ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপাদিত চিনি বাজারে না ছেড়ে নিজস্ব কোকাকোলা আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করছে। এছাড়াও আকিজ, এসিআই ও সেনা কল্যাণ গ্রুপের জন্য ওইসব প্রতিষ্ঠানের মোড়কে সরবরাহ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সুপারশপের কাছে তারা চিনি সরাসরি বিক্রি করে দিয়েছে।

দেশবন্ধু সুগার মিলের বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, একাধিক সাপ্লাই অর্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১০-১২ দিন পর চিনি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে পাকা রশিদ বা চালানে পণ্যের একক মূল্য উল্লেখ নেই। দেশবন্ধু সুগার মিলগেটে কোন মূল্য তালিকা নেই। মিলটিতে গ্যাস-বিদ্যুতের কোনো সংকটও নেই। মিলটি অপরিশোধিত চিনি প্রক্রিয়াজাত করে ৫০ কেজির বস্তা বাজারজাত করলেও কোনো খুচরা বা ছোট প্যাকেটে চিনি বাজারজাত করেনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এস আলম সুগার রিফাইনারীতে চিনি উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে তারা ৫০ কেজির বস্তায় ২০০-২৮০ গ্রাম চিনি কম দিয়ে থাকে। বাজারে থাকা এই কোম্পানিটির চিনির ৫০ কেজির বস্তায় বিক্রয়মূল্য উল্লেখ নেই।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মেঘনা ও সিটি সুগার মিল উৎপাদন কমিয়ে সংকট সৃষ্টি করেছে এবং দাম নিয়েও কারসাজি করেছে। মোনায়েম গ্রুপ উৎপাদিত চিনি বাজারে খুচরা পর্যায়ে না ছেড়ে নিজেদের কারখানায় ব্যবহার করে সংকট সৃষ্টি করেছে। দেশবন্ধু ও এস আলম সুগার মিল কারসাজি করে মূল্য বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চিনি নিয়ে কারসাজি ও কৃত্রিম সংকটকারীদের ধরতে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ১০৩টি তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বেশি দামে চিনি বিক্রি ও মজুতের অপরাধে ২৭৮ প্রতিষ্ঠানকে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঢাকার মৌলভীবাজার, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউনহল মার্কেট, মিরপুর শাহআলী মার্কেট, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ দেশের প্রায় সব জেলার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকি করা হয়।

অভিযানে দেখা যায়, বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে না এবং বাজারে চিনির সরবরাহ কম। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ কম। কোথাও প্যাকেটজাত চিনির প্যাকেট কেটে খোলা চিনি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। কিংবা প্যাকেটের এমআরপি মুছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

তদারকিকালে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, মিলগেট, খাতুনগঞ্জ বা মৌলভীবাজার থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে চিনি কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে চিনি কিনতে হচ্ছে।

মিলে চিনির উৎপাদন ও সরবরাহ কম: চিনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত চাপের গ্যাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু চিনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণে গ্যাসের চাপ প্রয়োজন বর্তমানে সে পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না মিলগুলোতে। ফলে চিনির উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে চিনির সরবরাহ কম হচ্ছে।

শুল্কহারের সমন্বয়: চিনি আমদানির ক্ষেত্রে এখনও শুল্কহার অত্যধিক বলে রিফাইনারির মালিকরা উল্লেখ করেন। তারা শুল্কহার সমন্বয়ের প্রস্তাব করেন। মুদ্রিত (পাকা) ভাউচার প্রদান না করা: চিনি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মুদ্রিত (পাকা) ভাউচার প্রদান করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিটি স্তরে মূল্য কারসাজির সুযোগ নেওয়া হচ্ছে।

এলসি খোলার জটিলতা: বড় এলসি খোলার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানায় রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা জানায়, আগের মতো সহজে এলসি খুলতে পারছে না।

মিলগেটে ট্রাকে চিনি লোডের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় জটিলতা: চিনি সরবরাহ নিতে ট্রাকগুলোকে ৭-৮ দিন পর্যন্ত মিলগেটে অপেক্ষা করতে হয়। তাদের দীর্ঘসময় অপেক্ষার ফলে চিনি পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব: ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবেও চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

বর্তমান চিনির বাজার স্থিতিশীলতার বেশকিছু সুপারিশ করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মিলগুলোকে তাদের সর্বোচ্চ উৎপাদন এবং সরবরাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা প্রদান, মিল থেকে খুচরা পর্যায়ে পর্যন্ত চিনি কোথাও অসাধু উদ্দেশে মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করছে কি না গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক তা নজরদারি করা, চিনির বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট/বাজার অভিযান অব্যাহত থাকতে হবে, মূল্য পর্যালোচনার জন্য ‘মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির’ নিয়মিত সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, চিনি উৎপাদনকারী মিলগুলোতে নির্ধারিত চাপের গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, মিল মালিক থেকে খুচরা পর্যায়ে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মুদ্রিত (পাকা) ভাউচার প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনা, মিলগেটে চিনি পরিবহনে (ট্রাক) সরবরাহ করতে অপেক্ষমাণ সময় কমিয়ে আনা এবং এলাকাভিত্তিক ডিলার নির্ধারণ করে সেই ডিলারদের মাধ্যমে এলাকার বাজারগুলোতে চিনি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সবশেষ গত ৬ অক্টোবর প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। পরদিন থেকেই নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দাম দিয়ে চিনি কিনতে হয় ক্রেতাকে। এর দুই সপ্তাহের মাথায় প্রতি কেজি চিনিতে ১০ শতাংশের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকার নিচে চিনি বিক্রি হচ্ছিল না। বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় চিনি। আর গত বৃহস্পতিবার থেকে বাজের চিনিই পাওয়া যাচ্ছিল না। এখনও বাজারে চিনির সংকট রয়েছে।

আজকের বাংলা তারিখ

April ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Mar    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  


Our Like Page