অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ (শনিবার) বেলা সোয়া ৩টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে শরিফ ওসমান হাদির জানাজা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং তার সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও পরিবারের সদস্যরা।
আজ সকাল ১০টায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে মানিক মিয়া এভিনিউতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকা ছাত্র-জনতাকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
এ সময় চীন থেকে আনা আটটি আর্চওয়ে গেট দিয়ে হাজারো সাধারণ মানুষ সারিবদ্ধভাবে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করেন। জানাজার ইমামতি করেন হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।
এর আগে, বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে হাদির মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ওসমান হাদির মরদেহ নেওয়া হয় মর্গে। এ সময় হাদির স্বজনরা সঙ্গে ছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় বন্দুকধারীরা শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই রাতেই সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে লাল-সবুজের কফিনে মোড়ানো হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
শরিফ ওসমান হাদি ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম।
ওসমান হাদির শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঝালকাঠির বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স মাস্টাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করার পর হাদি শিক্ষকতাকে বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শরিফ ওসমান হাদি এক সন্তানের জনক।