July 31, 2025, 9:28 am
শিরোনামঃ
বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মহেশপুরে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্মারকলিপি প্রদান ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিশ্ব মানবপাচার দিবস উপলক্ষে মতবিনিময় সভা ঝিনাইদহে ত্রিশ গ্রামের দশ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে ; বিএডিসির খাল এখন কৃষকের মরণ ফাঁদ তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সমস্যা মেটাতে কমিটি গঠন : ধর্ম উপদেষ্টা  ৫ আগস্ট কোনো ধরনের নিরাপত্তার সমস্যা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র সংস্কারের চাহিদা চেয়ে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চিঠি আওয়ামী লীগ এমপির কাছ থেকেও ৫ কোটি টাকার চাঁদা নিয়েছে আটক রিয়াদ ও তার দল একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে যশোরে র‌্যালি ও আলোচনা সভা নওগাঁয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ 
এইমাত্রপাওয়াঃ
আমাদের সাইটে নতুন ভার্ষনের কাজ চলছে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

জেনিনের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের মানবেতর জীবন যাপন

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অধিকৃত পশ্চিম তীরের এক পরিত্যক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েরা ফাঁকা ভবনের চারপাশে দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াচ্ছে। বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হবার পর এটি এখন তাদের খেলার মাঠ।

জেনিন থেকে এএফপি জানায়, স্টেডিয়াম আর ফুলের মাঠের মাঝখানে, যেখানে এখন ছাগল চরে, সেখানে একঘেয়েমি কাটাতে শিশুরা খেলছে। স্কুলে যাবার কোনো সুযোগ নেই তাদের, কারণ দুই মাসেরও বেশি সময় আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জেনিন শরণার্থী শিবির খালি করার নির্দেশ দেয়।

৫৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ শালাবি, যিনি এখন জেনিন শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েকশ ফিলিস্তিনির সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন, স্মরণ করলেন সেই দিনের কথা যেদিন বিশেষ ইসরাইলি বাহিনী শিবিরে ঢোকে।

তিনি বলেন, ‘সবাই জানে—সেনাবাহিনী ঢুকলে তারা অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়, এমনকি গাড়িও ছাড়ে না।’ তিনি পেশায় একজন পৌরকর্মী।

উত্তর পশ্চিম তীরজুড়ে জানুয়ারি ২১ তারিখ থেকে চালু হওয়া ইসরাইলের ‘আয়রন ওয়াল’ অভিযানে হাজারে হাজারে ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

শালাবি প্রথমে আশ্রয় নেন জেনিন শিবির থেকে কাছাকাছি গ্রামের দিকে, পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্থান দেয় আরব আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁকা ক্যাম্পাসে—যা একসময় পশ্চিম তীরের একটি মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল।

তিনি বলেন, ‘সব কিছু আমার ৮০ বছর বয়সী বাবার সঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে চলি, তাঁর শরীর ভালো নেই।’

‘তবে তিনি বোঝেন। মাঝেমাঝে কাঁদেনও। কারণ তিনি নাকবা দেখেছেন, আর এখন আবার…’ু ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় যে গণচ্যুতি ঘটেছিল, সেটিকেই নাকবা বলা হয়।

– ফেরার পথ নেই –

জেনিন শিবিরের যেসব বাসিন্দা এখন উদ্বাস্তু , তারা এমন আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন—তাদের পূর্বপুরুষদের ট্রমা কি আবার ফিরে আসছে?

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় নিষিদ্ধ করে দেওয়া সাম্প্রতিক আইন তাদের কাজ কঠিন করে তুলেছে।

অর্থাভাবে জর্জরিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যাদের পশ্চিম তীরের কিছু অংশে সীমিত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সাহায্য করতে পারছে না।

এছাড়া, বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যেই অধিকাংশ মনোযোগ দিচ্ছে গাজা উপত্যকায়—যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

একজন সমাজকর্মী বলেন, ‘এখানে কী হচ্ছে, তা নিয়ে কেউ মাথাই ঘামাচ্ছে না।’ তিনি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গড়া এই অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে গিয়ে কম্বল, খাবার বা বাজারের টাকা বিলি করেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা আবর্জনা সংগ্রহের মতো নাগরিক সুবিধা প্রায় নেই বললেই চলে। অভিভাবকেরা শিশুদের জন্য অস্থায়ী স্কুল গঠনের অনুরোধ জানালেও সাড়া মেলেনি।

বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। সবচেয়ে কাছের সুপারমার্কেট ২০ মিনিট হাঁটাপথ দূরে।

এদিকে, জেনিন শিবিরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বুলডোজার চালিয়ে যাচ্ছে, রেখে যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপ।

শরণার্থী শিবির থেকে বিতাড়িত মানুষদের অনেকেই ভাবছেন, তারা আর কখনোই ফিরে যেতে পারবেন না। কেউ কেউ ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।

উৎখাত হওয়া বাসিন্দা উম মাজদ বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে—এখন আমাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই। আর আমরা শিবিরে ফিরতেও পারব না।’

মার্চের শুরুতে ইউএনআরডব্লিউএ-র এক কর্মকর্তা জানান, ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা রয়েছে যে :মাঠে যা ঘটছে, তা পশ্চিম তীরকে দখল করে নেওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’

– দিন গুনে টিকে থাকা –

এই নতুন, অস্থায়ী শিবিরটি গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে—যা এখন এক বিভীষিকাময় দৃশ্যের অবয়ব।

ক্যাম্পাস ভবনগুলোর নাম যেমন ‘কাসা বেল্লা’, ‘কনকর্ড’, ‘দুবাই’—আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ এক আবহ তৈরি করলেও—এখন অনেক ভবনই খালি পড়ে আছে।

কয়েকটি ভবন এখন উৎখাত হওয়া পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি, যারা কখনো ১-২ জনের থাকার মতো স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে গাদাগাদি করে বসবাস করছে।

গ্যাস চুলায় রান্না, রাতে ফোমের গদি বিছিয়ে ঘুমানো। একটু জায়গা তৈরি করতে সকালে সেই গদি গুটিয়ে রাখতে হয়।

উম মাজদ বলেন, :আমরা আগের জীবনের মাত্র ২০ শতাংশ পেয়েছি এখানে।’ তিনি এখন দুইজনের কক্ষে চারজনের সঙ্গে মিলে থাকেন।

ক্যাম্পাসের আশেপাশের মাঠে কৃষকেরা ছাগল চরায়।

যেসব শিক্ষার্থী আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত, তাদের অনেকে ছিল ইসরাইলি নাগরিক ফিলিস্তিনি—যারা এখন নিরাপত্তাজনিত কারণে পশ্চিম তীরে পড়তে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলো হয় বন্ধ হয়ে গেছে, নয়তো সংস্কারে রয়েছে—যা অঞ্চলজুড়ে চলা অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত।

৩০ বছর বয়সী আহমাদ আবু জোস বলেন, ‘আমরা দিন গুনে বেঁচে আছি। কাজকর্ম নেই, সহায়-সম্বল নেই—ভবিষ্যতের দিকেও তাকাতে পারছি না।’

তাট ছোট ছেলে মুস্তাফা হাঁটতে শিখছে ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর, যেটা ডিটারজেন্ট আর রান্নার গন্ধে ভরা।

ছেলেটির মা রামা আবু জোস বলেন, -আমরা নিজের ইচ্ছায় শিবির ছাড়িনি। আমরা ঘরে ফিরতে চাই। এখানে কেউ স্বেচ্ছায় থাকতে চায় না।’

 

আজকের বাংলা তারিখ



Our Like Page