24 Dec 2024, 01:30 am

ঝিনাইদহে একজন পলাতক অধ্যক্ষের দুই আলীশান বাড়ি নিয়ে হৈচৈ ; চলছে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম এ কবীর,ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। একজন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে অধ্যক্ষ বাদশা আলম হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি ভারতে পালনের চেষ্টা করছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলম আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ। এক সময় ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখকের কাজ করতেন। এখনো দলিল লেখকদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি ঝিনাইদহ কলেজে প্রথমে প্রভাষক ও পরে এক বছরের জন্য ভাইস প্রিন্সিপাল হন। আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগ্যতা না থাকার পরও প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদ দখল করেন। চাকরী জীবন থেকেই তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ পদে আসার আগে তিনি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও আরাপপুর এলাকায় এখন তার দুইটি আলীশান বাড়ি। যার মধ্যে একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা বাড়ি। বাড়ি দুইটির আনুমানিক মুল্য ২০ কোটি টাকা হবে বলে তার প্রতিবেশিরা দাবী করেন।

বেসরকারী কলেজের একজন অধ্যক্ষের এমন দুইটি আলিশান বাড়ি কি ভাবে হলো তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৩ বছর অধ্যক্ষ হওয়ার সুবাদে তিনি কলেজের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন। কলেজে ভর্তির সময় নেয়া টাকার কোন হিসাব নেই। লাইব্রেরী ফান্ডে টাকা নেয়া হলেও বই কেনা হয়নি। শিক্ষার্থীদের আইডি বাবাদ ভর্তির সময় টাকা নেয়া হয়, কিন্তু আইডি দেয়া হয়না। ভর্তির সময় বিজ্ঞানাগারের জন্য টাকা কেটে রাখা হলেও ১৩ বছরে কোন যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। আইসিটি ও কৃষি শিক্ষার ব্যবহারীর পরীক্ষায় বাধ্যতামুলক ভাবে ৪০০ টাকা করে জোর পুর্বক আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। অনার্স লেভেলে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে আদায় করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ভাইভা পরীক্ষার নামে ছাত্র প্রতি ২০০০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এ নিয়ে ২০২৩ সালে ছাত্রলীগ কলেজে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করলেও অধ্যক্ষ বাদশা আলম এখনো জোরপুর্বক টাকা আদায় অব্যাহত রেখেছেন। কলেজে প্রতিটি নিয়োগে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। ডিগ্রী ও উন্মুক্ত পরীক্ষায় নকল সরবরাহের জন্য কলেজের মালি আসলামের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় উন্নয়ন বাবদ টাকা আদায় করা হলেও ১৩ বছরে কলেজের ফান্ড থেকে দৃশ্যত কোন উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ কলেজের ৬টি একাউন্ট থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে একাউন্টেন আইয়ুব হোসেনের সহায়তায় অন্তত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে দুইটি বাড়ি নির্মান করেছেন। এছাড়া অধ্যক্ষ বাদশা আলমের চাকরীর বয়স শেষ হলেও জাতীয় বিশ^বিদ্যলয়ের জাল কাগজ করে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে বসে আছেন। অবসরের পরও অবৈধ ভাবে চেয়ার দখল করা নিয়ে অধ্যক্ষ বাদশা আলমের কাছে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিসে গিয়ে জানা যায় সরকার পতনের পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস জানান, অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তিনি তদন্ত করবেন। তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 6031
  • Total Visits: 1418036
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২১শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১:৩০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018