এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ব্যক্তিগতভাবে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী খন্দকার সাখাওয়াত হোসেন ওরফে হিলু মিয়ার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই প্রভাবশালীর পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সময় ভুটিয়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলর টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন শেষে সরকারি জায়গার এ রাস্তা উচ্ছেদের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, জেলা শহরের পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতী এলাকায় ১ একর ২০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ভুটিয়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৭৫ জন। করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে বিদ্যালয়টির পশ্চিম পাশ দিয়ে স্কুলের জায়গায় মাটি ভরাট করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা করেছেন খন্দকার সাখাওয়াত হোসেন। আট ফিট প্রস্থের এই রাস্তাটির বিদ্যালয় অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফিট। পরবর্তীকালে স্কুল খোলার পর বিষয়টি নিয়ে স্কুলের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিবাদ জানানো হলেও তা আমলে নেননি তিনি।
পরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহানারা খাতুন। এই অভিযোগের পর থেকেই বিভিন্ন সময় তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ উঠে স্থানীয় কাউন্সিলর টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে।
প্রধান শিক্ষিকা শাহানারা খাতুন জানান, সরকারি স্কুলের জায়গা এভাবে কেউ দখল করে রাখতে পারে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না, দুর্ঘটনার ভয় থাকে। ভূমি অফিসের নির্দেশে আমরা নিয়মিত এই জমির কর পরিশোধ করি। তবুও কেন দখলদারদের কবলে পড়বে সরকারি জায়গা?
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগের পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বৈঠকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কাউন্সিলর টিপু সুলতান আমাকে নানাভাবে গালিগালাজ করে এবং কীভাবে স্কুলে চাকরি করি তা দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এমনকী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করারও ভয় দেখান। এরপর আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর টিপু সুলতান বলেন, বিনা কারণে প্রধান শিক্ষিকা হিলু মিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে। সে আমাদের না জানিয়ে এটা করতে পারে না। আমাকে কেন জানালো না? যার কারণে তাকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে খন্দকার সাখাওয়াত হোসেন ওরফে হিলু মিয়া বলেন, এটা পৈত্রিক সূত্রে আমাদের জমি ছিল। সর্বশেষ রেকর্ডে কোনো কারণে হয়তো বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের কিছু জায়গা বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক জমি স্কুলে দান করেছি। আমাদের জমি ছিল সেজন্য রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আইনে যদি এটা বিদ্যালয়ের জায়গা হয় তাহলে তারা উচ্ছেদ করবে। আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। আগে তাদের নিশ্চিত হতে হবে। আমরাও রেকর্ড সংশোধনে পরবর্তীতে আইনের আশ্রয় নেবো। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহজাহান রহমান বলেন, স্কুলের জায়গায় রাস্তা থাকায় যানবাহন চলাচলের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খুব সমস্যা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, হিলু মিয়া স্কুলের জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ করে ঠিক করেননি। রাস্তাটির কারণে যেমন শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে তেমনি বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দ্রুতই ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রাস্তাটি অপসারণ ও দখল মুক্ত করে বিদ্যালয়ের সীমানা ঘিরে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে যে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে সে বিষয়েও তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply