এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : শেখহাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহেও একের পর এক মামলা হচ্ছে। বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের শিকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর স্বজনরা বাদী হয়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে এসব হত্যা, অগ্নি সংযোগ এবং ভাংচুরের মামলা করছেন। এখন পর্যন্ত এ জেলায় ১১ মামলায় আসামী আসামী হয়েছেন ৯৬৬ জন।
এর মধ্যে চাকরিচ্যুত ঝিনাইদহের সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৮টি। তার সাথে আসামি হয়েছেন পুলিশের আরও ৪৩ সদস্য। এদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও ডিবি পুলিশ সদস্য। এজাহার অনুযায়ী একই ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন।
তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হননি। পুলিশের পাশাপাশি এসব হত্যা মামলায় ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার ১৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী নেতা মাওঃ আব্দুস সালাম হত্যা ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাংবাদিক সহ আওয়ামী লীগের ৮০৭ নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। আসামির তালিকায় ঝিনাইদহের সাবেক পাঁচজন এমপি রয়েছেন।
জানা যায় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতের ৪০ জন নেতাকর্মীকে সাদাপোশাকে তুলে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৩০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হন। ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবাজার মার্কেট কমিটির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের শিকার হন। ঘটনার দিন র্যাব পরিচয় দিয়ে রফিকুলকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়া মনোহরপুর খালপাড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এখনো কোন মামলা করেনি। তবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যার ঘটনায় ৮টি হত্যা ও ৩টি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা হয়েছে।
জানা যায় গত ২৭ আগস্ট জামায়াত কর্মী আব্দুস সালাম হত্যা মামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ৭০ জন, ২৯ আগস্ট যুবদল নেতা মিরাজুল ও শিবির নেতা ইবনুল পারভেজ হত্যা মামলায় ১১ পুলিশসহ ২৮ জন, ১ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ইদ্রিস আলী পান্না হত্যা মামলায় ৬ পুলিশসহ ২৯ জন,১১ সেপ্টেম্বর শিবির নেতা সাইফুল ইসলাম মামুন হত্যা মামলায় ৯ পুলিশসহ ১৪ জন, ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা এনামুল হত্যা মামলায় হত্যা মামলায় ৫ পুলিশসহ ১৯ জন, ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ও ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম আজাদ হত্যা মামলায় ৩ পুলিশসহ ১৯ জন, ১৮ সেপ্টেম্বর শিবির নেতা আবুজার গিফারী ও শামিম হত্যা মামলায় ৮ পুলিশসহ ২৩ জন, ১৯ আগস্ট বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ৪৬৮ জন, ২৫ আগস্ট ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় ২৩৮ জন ও বিএনপি নেতা আক্তারের দোকান ভাংচুর মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন (পিপি) জানান, এসব হত্যাকান্ডের বিষয়ে ঘটনার পরপরই সে সময় অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। এখন নতুন করে এসব মামলা তদন্ত হবে।
Leave a Reply