23 Nov 2024, 08:10 am

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না ; সংশোধন হবে : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না। এটা আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই। তবে সব আইনেই সাংবাদিকদের সুরক্ষার বিষয়টি রাখা হবে। তা ছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘শেপিং আ ফিউচার অব রাইটস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে সরকার কাজ করছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমস্যা দূর করে এটাকে সর্বসাধারণ আইন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনোই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করবেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করা হয়নি। এটা সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়েছে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে, অন্যথায় এ আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য হবে না। এভাবে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সম্পাদক পরিষদের সেমিনারে বলা হয়েছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যখন করা হয়, তখন সম্পাদক পরিষদ ও অন্য যারা মতামত দিয়েছিলেন, তাদের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। তাদের এমন বক্তব্য সঠিক নয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যখন করা হয়, তখন আমার সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়। তবে যে পর্যায়ে এই আলোচনা হয়, তখন আইনটি পার্লামেন্টে চলে যায়। তখন আমি সাজেশন দিই এবং যেটা গৃহীত হয় সেটা হচ্ছে, সংসদীয় কমিটিতে যখন এ বিলটা নিয়ে আলোচনা হবে, তখন সেখানে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তাদের সংসদীয় কমিটিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা সেখানে বক্তব্যও দিয়েছিলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটাতে সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধিরা একমত হয়েছিলেন। উনারা বলেছিলেন, ২১ ধারার শাস্তি কমিয়ে আনার জন্য। তাদের বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই ২১ ধারার শাস্তি কমিয়ে আনা হয়েছে। দ্বিতীয় কথা ছিল জামিন ও অজামিনযোগ্য বিষয়টি। অজামিনযোগ্য মানেই যে জামিন দেওয়া যাবে না, সেটা কিন্তু সঠিক নয়। আমি এটার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আইনে কিছু দুর্বলতা আছে। আমরা চেষ্টা করেছি সেগুলো দূর করার জন্য। এখনও আমরা সচেষ্ট আছি। সেটা আমরা সেটা করবো।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজ উদ্যোগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি সবসময় কথা বলে যাবো। কারণ, আইন সবার জন্য। তাই সব স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনের সঙ্গে কথা বলাটা আমি মনে করি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটা অংশ। বিশেষ করে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টের কথা বলা হয়েছে, আমি যতদূর শুনেছি সেখানে তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানে কিছু বিষয় আছে, সাংবাদিক মাধ্যমের কিছু বক্তব্য এখনও বোধহয় রয়ে গেছে। আমি মনে করি আলোচনা হবে। এ পর্যায়ে আলোচনা না হলেও সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হবে। আলোচনার দ্বার সবসময় উন্মুক্ত। আমরা আলোচনা করেই এ আইন পাস করবো। আলোচনা না করে আমরা কাউকে পাশ কাটিয়ে এ আইন পাস করবো না।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যেন অপব্যবহার না হয়, আমরা সেই বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর এ আইনে যখন মামলা হলেই যে মামলা গ্রহণ করা হয় তা নয়, এখন একটা সেলে পাঠানো হয়। এ সেলটা আইসিটি অ্যাক্টের একটা সেল ছিল। প্রথমে আমরা ওখানে পাঠাই। সেই অভিযোগ যদি এ আইনে মামলার করার মতো উপযোগী হয়, তখনই এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা হয়। শুধু সাংবাদিক নয়, সব ক্ষেত্রেই বলা আছে যে কেস হতে পারে এমন কিছু স্টাবলিশ না হওয়া পর্যন্ত যে কাউকে গ্রেফতার করা থেকে বিরত থাকতে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানেরও নিচে, এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, যারা এ অবস্থান নির্ণয় করেন, তাদের বিষয়ে আমার প্রশ্ন থেকে যায়। এটা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত।

আইনমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়। সংবাদ ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। শুধু তা-ই নয়, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির অঙ্গীকার। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি আওয়ামী লীগের উদার গণতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

ড. গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘বেশি গণমাধ্যম থাকলেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে না, সেটা আমরা কিছুটা হলেও দেখছি। এ ক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে মুক্তভাবে কাজ করতে পারা। বিভিন্ন গবেষণার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, যে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি, তথ্যের প্রবাহ বেশি, সে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশে বৈষম্য বেশি, সেসব দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কম। বৈষম্য বেড়ে গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমে যায়।

টিআইবির আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ইউনেসকোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুসান ভিজে, বাংলাদেশের জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লিউইস, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ ও বাংলাদেশে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা ভন লিন্ডে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 8368
  • Total Visits: 1275138
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৮:১০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018