অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত দুই দিনে তিনি নামিদামি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেক ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান থেকেও চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। এরমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান তাকে মাসে ২ লাখ টাকা বেতনের অফার দিয়েছে।
এর মধ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শরীফকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাহসী কাজ করতে গিয়ে চাকরি হারান দুদকের পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। চাকরি ফেরত চেয়ে তিনি দুদকের দ্বারে দ্বারে মাসের পর মাস ধরে ঘুরছেন। চাকরিচ্যুতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন। কিন্তু তার আবেদনে সাড়া দেওয়া হয়নি।
এমনকি তিনি চাকরি ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও দুদক থেকে তার বিরুদ্ধে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এমন বাস্তবতায় দিশেহারা হয়ে পড়েন শরীফ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকাই তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তিনি চট্টগ্রামে তার ভাইয়ের এক মুদির দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসলে সবাই ইতিবাচকভাবে শরীফের এই দুর্বিসহ জীবনের কথা তুলে ধরে।
জানা গেছে, গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নজরে গেলে তারা শরীফকে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। তবে শরীফ এ বিষয়ে এখনই কোনো কথা বলতে চান না।
তবে তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই আমার পাশে থাকার জন্য। তাদের কারণেই আমি অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।’
বুধবার দুপুরে শরীফ বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে আমি ভিকটিম হয়েছি। দুদক যেখানে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কথা, সেখানে আমার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আমি এই অংক মেলাতে পারছি না এখনো। আমার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি কমিশন। পারবেও না ইনশাআল্লাহ।’
শরীফ আরও বলেন, ‘আমি আমার সততার সবটুকু দিয়ে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। অনুসন্ধান করেছি, তদন্ত করেছি, মামলা করেছি। এটা যদি আমার অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে দুদকে যারা ভালো কাজ করে তারা সবাই অন্যায় করছে। আর যদি আমার কাজ সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে দুদকের উচিত আমার পাশে দাঁড়ানো।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফকে দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আদেশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৫৪(২)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
তবে সেই নোটিশে চাকরিচ্যুত করার নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি খোলাসা করাও হয়নি। তাকে চাকরি ফেরত দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। জাতীয় সংসদেও তার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এমনকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুদক কর্মকর্তারা তার জন্য মাঠে নেমেছিলেন। এতকিছুর পরও চাকরি ফেরত পাননি শরীফ।
জানা গেছে, দুদকের বড় বড় অভিযোগের ফাইল অনুসন্ধানে নিয়োজিত ছিলেন সংস্থার উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। এরমধ্যে অন্যতম কক্সবাজারে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণ কাজে দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পখ্যাত কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্পে অনিয়ম উদঘাটন, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির উৎস অনুসন্ধান, কর্ণফুলী গ্যাসের বড় বড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মামলার সুপারিশ করেছিলেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দিয়েছিলেন শরীফ।
কক্সবাজারের জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ২২ জন আমলা, তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি কাল হয়ে দাঁড়ায় শরীফ উদ্দিনের। ২০২১ সালের ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। পরবর্তীসময়ে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪-এর ২ ধারায় কমিশনের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪(২) ধারায় বলা আছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে ৯০ দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দুদকের মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা বলেন, শরীফের দেওয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উল্টো কোনো আইন না মেনে ওইসব মামলা তদন্তে পুনরায় কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। পুনরায় তদন্ত করে বড় বড় আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply