অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে এমন নেতিবাচক ভাবার্থ থাকায় ও শ্রুতিকটু হওয়ায় নাটোরের ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়। একই সময়ে সারাদেশের মোট ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্বাধীনতার পরে এবারই প্রথম এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নাটোরের ৫১টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হলেও পাশের জেলা রাজশাহীতে দুটি, নওগাঁয় তিনটি এবং বগুড়া জেলার চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
নাটোরের ৫১ টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নাম পরিবর্তনে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও সেই এলাকাবাসী খুশি হয়েছেন। অপরদিকে গণহারে নাম পরিবর্তনের অভিযোগ এনে নাটোরের সচেতন মহলের অনেক মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বলদখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপর গোপাল চদ্র কর্মকার জানান, বলদখাল নাম নিয়ে অনেকেই অনেক কটু কথা বলতো। এ নিয়ে আমরা বিব্রতবোধ করতাম। বিদ্যালয়টির নাম পাল্টে স্বপ্নসিঁড়ি হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ।
মাটিকোপা গ্রামের বাসিন্দা শরীফ উদ্দিন জানান, মাটিকোপা স্কুলে আমরা পড়াশোনা করতাম। স্কুলের নাম নিয়ে অন্য এলাকার বন্ধুরা হাসি-ঠাট্টা করত। এখন স্কুলের নামটি মাতৃছায়া হওয়ায় খুশি হয়েছি।
অপরদিকে গণহারে নাম পরিবর্তনের অভিযোগকারীরা বলছেন, স্থানীয় মানুষের মতামত না নিয়ে নিজেরা অফিসে বসে হঠাৎ করে প্রচলিত গ্রামের নাম পরিবর্তন করে নদী ও ফুলের নামে নাম পরিবর্তন করা উচিত হয়নি।
জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার কচুগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে মাধবীলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কীভাবে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়েছে এটা তারা কেউ জানেন না।
একই গ্রামের বাসিন্দা সাপ্তাহিক চলনবিল প্রবাহের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুল হক খোকন বলেন, কচুগাড়ী শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম। এভাবে হঠাৎ করে গ্রামের বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মাধবীলতা রাখায় গ্রামের মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। শিশু মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে কিছু নাম এমন থাকলেও অনেক নাম বিনা কারণে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
একই ভাবে জেলার নলডাঙ্গার রামশার কাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে আমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অপর দিকে বড়াইগ্রামের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে পাবনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং খাকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বনলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ধরনের সাধারণ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বিদ্যালয়ের নতুন নামকরণের কোনো প্রয়োজন ছিল না বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা কমিটির সদস্য বুলবুল আহমেদ বলেন, নাম পরিবর্তন করা প্রতিষ্ঠানের সবগুলো পরিবর্তন না করলেও চলতো। বহু মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রামকে চেনে। শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করলে সমস্যার সমাধান হলো না। স্থায়ী সমাধানের জন্য ওইসব গ্রামগুলোর নামও পরিবর্তন করা দরকার। তাছাড়া যেসব নাম দেওয়া হয়েছে ফুলের বা নদীর নামে তার চাইতে বিখ্যাত মানুষদের নামে দিলে বেশি ভাল হতো বলে আমি মনে করি। তাতে নতুন প্রজন্ম একদিকে ইতিহাস জানতো অন্যদিকে আইডল পেতো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী গণমাধ্যমকে জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল। তাদের সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সভায় তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে শিশু মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে এমন নেতিবাচক ভাবার্থ থাকায় ও শ্রুতিকটু হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নাটোরের ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রেখেছে।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছিল যে, শ্রুতিকটু বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে প্রস্তাবনা দেওয়ার জন্য। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিতে নিয়ে আসা হয়। যথেষ্ট পর্যালোচনা করে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব প্রেরণ করেছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে ৫১টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর পরে অনেকেই আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
Leave a Reply