অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দেশের সবগুলো চিনিকল যখন লোকসানের ভারে একেরপর এক বন্ধ হয়ে পড়ছে তখন সরকারকে প্রচুর রাজস্ব দিয়েও দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি মুনাফা অর্জন করছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কেরু চিনিকল প্রতিষ্ঠাকালের সকল রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব খাতে ১৪০ কোটি ও চিনি কারখানার প্রায় সাড়ে ৬২ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়েও মুনাফা অর্জন হয়েছে ১২৯ কোটি ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, যা চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৮৮ বছরের সকল রেকর্ড ভেঙেছে।
এদিকে কেরু চিনিকলটি আরও লাভজনক করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ চাষ করায় আগামী মাড়াই মৌসুমে চিনি কারখানায় লোকসানের বোঝা অনেকাংশে কমতে পারে।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরু চিনিকলের বয়স ৮৮ বছর পেরিয়েছে। জোড়াতালি দিয়েই বারবার আখ মাড়াই মৌসুমের কার্যক্রম চালু করা হয়ে থাকে। খানেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে আখ মাড়াই কার্যক্রম কোনোভাবে শেষ করা হয়। লাগাতার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাজেহালে হতে হয়।
তবে ভিন্ন অবস্থায় রয়েছে ডিস্টিলারি কারখানা। কেননা মিলের ডিস্টিলারি বিভাগসহ অন্যান্য ৫টি ইউনিট সরকারে ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে ও চিনি কারখানার লোকসান পুষিয়ে নিট ১২৯ কোটি ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনেও বেশ সম্মানিত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চিনিকলের হিসাব বিভাগ জানান, এ অর্থবছরে ডিস্টিলারি বিভাগে ফরেন লিকার উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ২২০ কেচ,সি এস কান্ট্রি স্পিরিট উৎপাদিত হয়েছে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার প্রুফ লিটার, ভিনেগার উৎপাদিত হয়েছে ২১ হাজার লিটার, যার বর্তমান বাজারের বিক্রয় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৯০ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
বাণিজ্যিক খামার থেকে মুনাফা অর্জিত হয়েছে ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকা, পরীক্ষা মূলক খামার থেকে ৩০ লাখ ২ হাজার টাকা, জৈবসার কারখানা থেকে ৭৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।
চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানান, কেরু এন্ড কোম্পানির উৎপাদিত মালামালের রাজস্ব ও ভ্যাট বাবদ সরকারকে ১৪০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা প্রদান এবং চিনি কারখানায় ৬২ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়েও সামগ্রিক ভাবে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
চিনি কারখানায় লোকসান বিষয়ে মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) জনাব সুমন কুমার জানান, ৮৮ বছর বয়সী মিলের কারখানাটি বয়সের ভারে ন্যুব্জ অবস্থা। কারখানার বি,এম,আর- এর কাজ চলমান রয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে, নতুন উদ্যমে শ্রমিক কর্মচারীরা কাজে লেগে পড়বে। লোকসান কমে আসবে।
এ বিষয়ে মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) জনাব আশরাফুল আলম ভুঁইয়া জানান, উন্নত প্রযুক্তিতে আখ-চাষ, আখের সঙ্গে সাথী ফসল ও অধিক চিনিযুক্ত আখ রোপণের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
মহাব্যবস্থাপনা (ডিস্টিলারি) রাজিবুল হাসান জানান, ডিস্টিলারি বিভাগে অটোমেশনের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে এবং অত্যাধুনিক বোতল-জাত প্রক্রিয়া করায় বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে মোটা অংকের মুনাফা অর্জিত হয়েছে।
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মো.রাব্বিক হাসান (এফ সি এম এ) জানান, ১৯৩৮ সালে কেরু কমপ্লেক্সটি স্থাপিত হওয়ার পর এই প্রথম মিলটি মোটা অংকের টাকার লাভের মুখ দেখলো, যা এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী, আখচাষী ও সুধীজনদের অবদানে সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরু চিনিকলকে অধিক লাভের মুখ দেখতে বেশি বেশি আখ চাষের বিকল্প নেই।