অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আদালত বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যারা স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি পেয়েছেন, তাদের জন্য সুসংবাদ। এই প্রথমবারের মতো দেশটিতে পুরোদমে চালু হতে যাচ্ছে ‘সুইসাইড ক্যাপসুল’ বা সারকো ক্যাপসুল।
স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতিপ্রাপ্তদের সহযোগিতা প্রদানকারী সংস্থা দ্য লাস্ট রিসোর্ট অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তারা এএফপিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, আর বড়জোর এক কিংবা দু’মাসের মধ্যে সহজে বহনযোগ্য এই যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু হবে সুইজারল্যান্ডে।
খানিকটা ছোটো আকারের নভোযানের মতো দেখতে এই সারকো ক্যাপসুল । ‘সারকো’ শব্দটি মূলত ইংরেজি সারকোফ্যাগাসের সংক্ষিপ্ত রূপ, যার বাংলা অর্থ শবাধার। সুইজারল্যান্ডের ‘ডক্টর ডেথ’ নামে বিখ্যাত চিকিৎসক এবং অ্যানাসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ ফিলিপ নিৎশে ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো সহজে পরিবহনযোগ্য এই ক্যাপসুলটি তৈরি করেন। তবে তিনি তা প্রকাশ্যে আনেন আরও ২ বছর পর, ২০১৯ সালে।
স্বেচ্ছামৃত্যু বরণে ইচ্ছুক ব্যক্তি এই ক্যাপসুলে প্রবেশের পর প্রথমে সেটির ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপর ওই ব্যক্তির নিঃশ্বাসের জন্য ক্যাসুলের ভেতরে নিঃসৃত হতে থাকবে নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিপূর্ণ একপ্রকার বিশেষ বাতাস। সেই বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার এক মিনিটের মধ্যে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ঘটবে ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা ব্যক্তির।
ড. ফিলিপ নিৎশের দাবি, এই প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছামৃত্যু বরণে ইচ্ছুক ব্যক্তি শিগগিরই ঘুমিয়ে পড়বেন এবং সম্পূর্ণ বিনা কষ্টে, ঘুমের মধ্যেই তার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, অনুমোদিত চিকিৎসাকর্মীর সহায়তা নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশেই বৈধ। সেসব দেশের মধ্যে সামনের সারিতেই রয়েছে সুইজারল্যান্ড। ২০২০ সালে দেশটিতে অন্তত ১,৩০০ মানুষ ‘সহায়তাকৃত আত্মহত্যা’-র পথ বেছে নিয়েছেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বেচ্ছামৃত্যুতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সারকো ক্যাপসুল ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সুইজারল্যান্ডের সরকার। তবে ব্যক্তিগতভাবে এই যন্ত্র ক্রয়ের অনুমতি এখনও দেওয়া হয়নি। কয়েকটি সংস্থাকে এই যন্ত্র ক্রয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, দ্য লাস্ট রিসোর্ট অর্গানাইজেশন সেগুলোর মধ্যে একটি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতিপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি এই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারবেন, বিনিময়ে তাকে দিতে হবে ২০ ডলার।
দ্য লাস্ট রিসোর্ট অর্গানাইজেশনের শীর্ষ নির্বাহী ফ্লোরিয়ান উইলেট এএফপিকে বলেন, “আদালত অনুমতি প্রদানের পরও কিছু প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বাধ্যবাধকতার কারণে এই ক্যাপসুলটি ব্যবহারের জন্য প্রচলন করতে খানিকটা সময় লাগছে। তবে এর মধ্যে অনেকেই আমাদের কাছে আবেদন করেছেন যে এই ক্যাপসুলে তারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান।”
ফ্লোরিন উইলেট আরও জানান, সরকারি আইন অনুযায়ী যেসব ব্যক্তির বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি, কেবল তারাই এ ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারবেন। দ্য লাস্ট রিসোর্ট অর্গানাইজেশন এই আইন কঠোরভাবে মেনে চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
“স্বেচ্ছামৃত্যু খুবই স্পর্শকাতর একটি ব্যপার। যারা স্বেচ্ছামৃত্যু বরণে ইচ্ছুক, আমরা চাই না তাদের নিয়ে সমাজমাধ্যমে কোনো প্রকার সার্কাস হোক। এ কারণে আমরা বিজ্ঞাপণ দেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“তবে একটি কথা সত্য— সারকো ক্যাপসুলে মৃত্যু সবচেয়ে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য এই ক্যাপসুলে প্রবেশ করবেন, ঢাকনা বন্ধ হওয়ার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়েই মৃত্যু ঘটবে তার।”
Leave a Reply