অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ‘ফরিদপুর চরভদ্রাসন ও পার্শ্ববর্তী সদরপুর উপজেলায় রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরবর্তী কৃষিজীবী মানুষ। গত রবিবার সদরপুর উপজেলার একটি ধানখেত থেকে তিনটি বিষধর রাসেল ভাইপার পিটিয়ে মারার খবর পাওয়া গেছে। ঐ উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের কাজীডাঙ্গী গ্রামে ঐদিন সকাল ৯টা হতে ১০টার মধ্যে সাপগুলো মারা হয়। পরে সাপগুলো পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।
ঐ গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল বেপারীর ছেলে রুবেল মাহমুদ বলেন, গত অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী ধানখেতে সার দিতে গিয়ে রাজশাহীর খোরশেদ নামের এক দিনমজুর সাপের কামড়ের শিকার হন। পরে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা দিলে একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিন দিন পর তার ছেলে খোরশেদকে বাড়ি নিয়ে যান। এর চার দিন পর তিনি মারা যান। কামড়ের পর তিনি রাসেল ভাইপারের নাম না বলতে পারলেও এটুকু বলেন, কোটওয়ালা সাপ। এতে তারাও বুঝতে পারেনি আসলে কি সাপে তাকে কামড় দিয়েছে। এর প্রায় এক মাস পর ধান কাটার জন্য লোক নিয়ে আসেন তারা। ধান কাটার এক পর্যায়ে এক দিনমজুর সাপ বলে চিৎকার করে উঠেন। এ সময় অন্যরা এগিয়ে এসে সাপটিকে পিটিয়ে মারেন। কিছু সময় পর আরও দুটি রাসেল ভাইপার মারা পড়ে উপস্থিত মানুষের হাতে।
এছাড়া এক সপ্তাহ আগে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামে নদী সাঁতরে একটি রাসেল ভাইপার তীরে এলে সেটিকেও পিটিয়ে মারে স্থানীয়রা। কয়েক জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠে সাপের ভয়ে কাজ করতে যেতে ভয় পাচ্ছে তারা। মাঝে মধ্যেই সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। গত ১ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নে বিষাক্ত এই সাপের কামড়ের তিন দিন পর শেখ রাজ্জাক (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়।
বিষধর রাসেল ভাইপার কামড় দিলে চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য প.প. কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, অত্র উপজেলা বিশেষ করে চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার ও অন্যান্য বিষধর সাপের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিভেনাম মজুত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকজন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে করে কাউকে সাপে কামড় দিলে দ্রুত তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। রাসেল ভাইপার সাপ বেশির ভাগ সময়ে পায়ে কামড় দেয়। তাই সম্ভব হলে গামবুট পরে ফসলের মাঠে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, সাপে যদি কাউকে কামড় দেয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক না করিয়ে দ্রুত হাসপাতালে আনতে হবে। সাপের কামড়ের রোগীকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া গেলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। ২০১৯ সালে পর এই উপজেলায় সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম থাকলেও এ বছর চরাঞ্চলে প্রায়ই বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ মারা পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে বলেও যানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে উপজেলার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে প্রথমে এই সাপের দেখা মিলে। ২০১৭/২০২০ সাল পর্যন্ত বিরল প্রজাতির এই বিষধর রাসেল ভাইপারের দংশনে অত্র উপজেলায় বেশ কয়েক জন কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আগে চরাঞ্চলে এই সাপ দেখা গেলেও বর্তমানে এই বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
Leave a Reply