অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া নিরপরাধ ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে কৃত আচরণের তুলনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরাইলি বন্দিদের সঙ্গে কৃত আচরণের পার্থক্য বিপুল বিস্ময়-জাগানো।
হামাসের সঙ্গে সাম্প্রতিক বন্দি বিনিময়ে মুক্ত হওয়া ইসরাইলি নারী সেনারা তাদের সঙ্গে কৃত মানবীয় ও সদাচরণের বিষয়টি স্বীকার করায় এ বিষয়ে আবারও বিপুল বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এর আগেও মুক্তি পাওয়া ইসরাইলি নারী বন্দিরা একই ধরনের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
লিয়াত ইতজিলি নামের এক ইসরাইলি নারী সেনা ইসরাইলি দৈনিক হারেতজ-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে হামাসের ভালো ব্যবহারের কথা তুলে ধরে বলেছেন: ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা তার সঙ্গে ভালো আচরণ করেছেন, তাকে হুমকি দেননি, তাকে তার নিজস্ব বিভিন্ন পোশাক পরার অনুমতি দিয়েছেন এবং এমনকি তার চশমা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছেন।
তাকে রাখা হয়েছিল খান ইউনুসের একটি বাসভবনে। ফিলিস্তিনি সংগ্রামীর মা তাকে সান্ত্বনা দিতেন। এই ইসরাইলি নারী সেনা যা কিছু দাবি করতেন ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা তার জন্য সেসব সংগ্রহ করতেন। তারা তাকে গোসল করার ও কাপড় ধোয়ারও সুযোগ দিতেন। লিয়াত আরও জানিয়েছেন, ওই বাসভবনে তিনি ছিলেন পুরোপুরি স্বাধীন, কেউ তার পিছে লেগে থাকত না। ঘরের ভেতরে তিনি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতেন এবং তাকে আলজাজিরা টেলিভিশন দেখার অনুমতি দেয়া হত। সবজি জাতীয় খাবারের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ লক্ষ্য করেছিলেন তার পাহারাদাররা। তারা এই ইসরাইলি সেনার জন্য পিজ্জা এবং নানা ধরনের ফল ও সবজিরও ব্যবস্থা করতেন।
ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের আটক-কেন্দ্র থেকে মুক্ত হওয়ার একদিন পর দানিয়েল নামের এক ইসরাইলি সেনা কাস্সাম ব্রিগেডের কমান্ডারদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন: আমার কন্যা এমিলিয়ার সঙ্গে অসাধারণ মানবীয় আচরণ করার জন্য আমি আন্তরিক চিত্তে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনারা তার জন্য ছিলেন বাবা ও মায়ের মত এবং সে যখনই চাইত তখনই আপনারা নিজস্ব কক্ষে তাকে ঢোকার সুযোগ দিতেন। ফলে সে ভাবত আপনারা সবাই তার বন্ধু ও শুধু বন্ধুই নয় বরং তার ঘনিষ্ঠ ও প্রকৃত আত্মীয়-স্বজন। শিশুদের বন্দি রাখা উচিত নয়, কিন্তু আপনাদের দয়ায় ও অন্যান্য একদল ভালো মানুষের সঙ্গে এ বিষয়ে পরিচিত হলাম। আমার কন্যাটিতো নিজেকে গাজার রাণী বলে মনে করত। আমি চিরকাল আপনাদের কাছে ঋণী থাকব, কারণ আমার ছোট্ট মেয়েটি কোনো মানসিক ক্ষতির শিকার না হয়েই গাজা থেকে ফিরে এসেছে।
ইয়োখাভিদ লিইউশতার নামের আরেক ইসরাইলি বন্দিও নানা সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার সঙ্গে হামাস-সংগ্রামীদের মানবিক আচরণের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে যখন গাজায় আনা হল তখন প্রথমেই তারা বলেছেন যে তাঁরা পবিত্র কুরআনে বিশ্বাস করেন ও মুসলমান এবং তাঁরা কোনো ক্ষতি আমাদের করবেন না, বরং নিজ সহযোগীদের সঙ্গে যে আচরণ তারা করেন আমাদের সঙ্গেও ঠিক সেইরকম আচরণই করা হবে। তারা ছিল খুব ভালো মানুষ ও দয়ালু। আমরা ভালোভাবে খাবার খাচ্ছি কিনা সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে চাইতেন। আমাদের ও তাদের খাবারে কোনো পার্থক্য ছিল না। আমাদের সঙ্গে তারা খুব ভালো আচরণ করতেন। এমনকি আমাদের খুঁটিনাটি বিষয়েও তারা যত্ন নিতেন।
অ্যালমুগ গোল্ডেস্টাইন নামক ৪৮ বছর বয়স্ক এক ইসরাইলি বন্দি তার সঙ্গে কাস্সাম ব্রিগেড সদস্যদের সদাচরণের কথা তুলে ধরে ইসরাইলি চ্যানেল টুয়েলভকে বলেছেন, ওরা তথা হামাস সদস্যরা আমার ও আমার তিন সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য ইসরাইলি বোমা বর্ষণের মুখে জীবন কুরবানি করতেও প্রস্তুত ছিলেন। আমরা একটি সুপারমার্কেটে থাকা অবস্থায় বোমা বর্ষণ শুরু হয়। আমরা তখন এক পাথরের বোর্ডের পেছনে আশ্রয় নিলাম এবং হামাসের সশস্ত্র প্রহরীরা আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাঁদের শরীরকে আমাদের রক্ষার জন্য ব্যবহার করছিলেন।
ইসরাইলি কান নামক বার্তা সংস্থার সাংবাদিকও গাজায় প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধ-বিরতির আওতায় মুক্ত হওয়া তিন ইসরাইলি নারী বন্দি সম্পর্কে বলেছেন, ৪৭১ দিন বন্দি থাকার সময় তারা খুব সহজেই আরবি ভাষা শিখেছেন এবং পরিপূর্ণ নিরাপদ ও সুস্থ ছিলেন।
রুশ সংবাদসংস্থা স্পুতনিকও ৪০০ দিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পাওয়া ইসরাইলি নারী বন্দিদের শারীরিক অবস্থাকে প্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করে লিখেছে, আর এ থেকেই বোঝা যায় ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা কতটা উন্নত নৈতিক ও মানবিক নীতিমালা মেনে চলেন।
হিব্রু ভাষার ইসরাইলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, ইহুদিবাদী বন্দিদের মুক্তি দেয়ার সময় হামাস তাদেরকে গাজার ম্যাপ, বন্দিদের ছবি ও প্রশংসাপত্রসহ নানা জিনিসপত্র গিফট দিয়েছে।
Leave a Reply