অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর বান্দ রোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে গণমাধ্যমে তার ইশতেহার তুলে ধরেন।
ফয়জুল করীম বলেন, ভোট দেওয়া কোনো আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়। এটা ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব। বুঝে-শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে তাকেই ভোট দিতে হবে যার দ্বারা দুর্নীতি হবে না, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না, সমাজে জুলুম ছড়িয়ে পড়বে না, মানুষের কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না, মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে। দলমত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে এমন ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের কর্তব্য।
হাতপাখার এই প্রার্থী বলেন, বরিশাল নগরীকে দুর্নীতি, দুঃশাসন, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত, উন্নত ও নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের খাদেম হয়ে থাকতে চাই।
ফয়জুল করীমের দাবি, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, বহুবিধ দুর্ভোগ, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনৈতিক আধিপত্য নগরবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে। জনমনে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই; মানবজীবনের নিরাপত্তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বরিশালকে একটি নিরাপদ জনপদে পরিণত করার দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত। এজন্য হাতপাখায় সকলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফয়জুল করীমের ইশতেহার
১. বরিশাল নগরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। নগরীর ভিক্ষুকদের অসহায়ত্ব দূরীকরণ ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নগরীতে কেউ অনাহারে থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।
২. নগরবাসীর জন্য নিরাপদ বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা হবে। বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স ও সকল ধরনের লাইসেন্স ফি সহনশীল পর্যায়ে আনা হবে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা সহজ করা হবে। স্বল্প খরচে কোনো প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই নতুন বিল্ডিং প্ল্যান পাস করা হবে। এছাড়া হকারদের জন্য স্বতন্ত্র হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হবে।
৩. নগরীতে টেকসই ও উন্নত রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হবে। নদীভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। শহরের সবুজায়ন ও শোভাবর্ধন করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য আধুনিক মানের ড্রেন নির্মাণ ও খাল খনন করা হবে। পরিকল্পিত ইউটিলিটি টানেল ও সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। সুইসগেট ও পানি নিষ্কাশন পাম্পের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে।
৪. নগরীর জনবহুল এলাকায় পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। নগরীর বর্ধিত এলাকার রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎসহ সকল নাগরিক সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে। ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস সংযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৫. নগরীর প্রতিটি রাস্তায় সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে। পথচারীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ফুটপাতগুলো প্রশস্ত করা হবে। নগরীর যানজট নিরসনে আধুনিক ট্র্যাফিক সিগনাল বসানো হবে। মোড়গুলোতে আইল্যান্ড ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে বছরের শুরুতে নগরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।
৬. শের-ই-বাংলা মেডিকেল ও সদর হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অসহায়, গরিব ও ছিন্নমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। গরিব মহিলাদের গর্ভকালীন চিকিৎসা ফ্রি করা হবে। বরিশাল নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরিমিত পরিসরে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হবে।
৭. সিটি কর্পোরেশনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা চালু করা হবে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হবে। নগরীর বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কম্পিউটার, আউটসোর্সিং ও বহুমুখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
৮. পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিছন্নতাকর্মীদের মাধ্যমে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি এলাকায় ঢাকনাসহ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের পূর্বেই সকল ধরনের বর্জ্য নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট স্থানে অপসারণ করা হবে। নগরীর ধুলাবালি দূরীকরণ ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা হবে। ক্ষতিকারক কীট ও মশা নিধনের লক্ষ্যে পরিবেশবিদদের পরামর্শে মহল্লাভিত্তিক মশক ও কীট নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৯. নগরীর পিছিয়ে পড়া গরিব, ছিন্নমূল ও বস্তিবাসীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ সকল সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। গুচ্ছগ্রামগুলো (বস্তি) চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত করা হবে। গুচ্ছগ্রামবাসীদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১০. বরিশালকে মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার ও সিন্ডিকেটমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সেমিনারের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা হবে।
১১. মানবিক কারণে পায়েচালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি-অটোবাইক এবং জ্বালানি তেলচালিত থ্রি-হুইলারের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র দেওয়া হবে।
১২. বেকারত্ব দূরীকরণে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগরীতে শিল্প-বাণিজ্য খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। বিদেশগামী জনশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা কার্যকরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সকল চাকরিজীবীদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের চাকরি পুনর্বহাল করা হবে।
১৩. নারী নির্যাতন ও যৌতুক প্রথা উচ্ছেদে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। নারীদের পৃথক কর্মসংস্থানের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা এবং সম্মান সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহিলাদের জন্য পৃথক মহিলা মার্কেট গড়ে তোলা হবে। নারী অবমাননা ও ইভটিজিং প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৪. নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহানগরের প্রধান সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় থানাগুলোর সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশ ও নৈশপ্রহরী নিয়োগ করে নগরবাসীর নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
১৫. দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থী নয় এমন সকল ক্রীড়া ও শিল্পকলা বিকাশের সুযোগ দেওয়া হবে। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং সুস্থ বিনোদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে।
১৬. সকল ধর্মের মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সম্প্রীতি পরিষদ’ গঠন করা হবে। রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয় বরং সকল রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের পরামর্শক্রমে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করা হবে।
১৭. দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘নগর বিশেষজ্ঞ কমিটি’ গঠন করা হবে। নগরীর ওলামায়ে কেরাম, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ‘পরামর্শ পরিষদ’ গঠন করা হবে। বিগত দিনে যারা বরিশালের সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধি ছিলেন তাদেরকেও সঙ্গে নিয়ে নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করা হবে।
ইশতেহার ঘোষণাকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, বরিশাল জেলা সভাপতি মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, কেন্দ্রীয় মহিলা ও পরিবারকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply