অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : স্বাধীনতা দিবসে করা একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া (৩৬) নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বাদী কিবরিয়া নিজেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। তার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নাটোর সদর উপজেলায়।
এজাহারে যা আছে : মামলার বাদী অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটের দিকে তিনি ব্যক্তিগত কাজে ফার্মগেটের আলরাজী হাসপাতালের সামনে অবস্থান করার সময় মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেখছিলেন। এ সময় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের একটি ছবিসহ সংবাদ দেখেন। সংবাদটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে।
সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত পোস্টটি ভাইরাল হয়।
সংবাদটি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এই ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মহান স্বাধীনতা দিবসে এই সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
পরবর্তীতে ৭১ টিভিসহ তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন, কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়, তার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি, মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ। প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর।
সাত বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝে মধ্যে ফুল বিক্রি করে। সাংবাদিক শামসুজ্জামান-এর প্রস্তুতকৃত প্রথম আলোর সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইল এর স্বাধীনতা লাগব’। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক তার হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে।
এতে প্রমাণিত হয় স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মহান স্বাধীনতা দিবসে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করায় বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাদী ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।
এদিকে মামলার বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো.ইমরান হোসেন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
Leave a Reply