October 23, 2025, 7:32 am
এইমাত্রপাওয়াঃ

বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার : ইউনিসেফ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক বাংলাদেশের প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় ৩ জন (২৮.৯ শতাংশ) বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার—যা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত ‘জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই)’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতায় এই সূচক তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান—এই তিনটি প্রধান সূচকে বঞ্চনার সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা। এতে তাদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে প্রাপ্তবয়স্কদের হারের (২১.৪৪ শতাংশ) তুলনায় শিশুদের দারিদ্র্যের হার প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। দেশের প্রায় তিন কোটি ৯০ লাখ মানুষ এই দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে, যার মধ্যে শিশুদের অনুপাত আশঙ্কাজনক।

বিশেষত গ্রামীণ এলাকার শিশুরা শহরাঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি বঞ্চনার শিকার। শিক্ষা খাতে উপস্থিতির হার কম থাকায় শিক্ষাবঞ্চনা শিশুদের দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় চালক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্যের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এই জেলাগুলো হলোবান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা। এর মধ্যে বান্দরবানে এই হার সবচেয়ে বেশি—৬৫.৩৬ শতাংশ।

আটটি বিভাগের মধ্যে সিলেট বিভাগে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ (৩৭.৭০ শতাংশ। পূর্বাঞ্চলের এই ঘনত্ব আঞ্চলিক দারিদ্র্য-ক্লাস্টারের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে শিশুদের দারিদ্র্যের হারও তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলে অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের উপস্থিতি বেশি হলেও শিশুদারিদ্র্য তুলনামূলক কম।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এমপিআই’র সৌজন্যে এখন আমাদের হাতে একটি কার্যকরী টুল আছে, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কোথায় ও কীভাবে শিশুদারিদ্র্য প্রভাব ফেলছে। এই তথ্য নীতিনির্ধারকদের কাছে দারিদ্র্য মোকাবিলায় একটি কার্যকর দিকনির্দেশনা দেবে।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের প্রতি বঞ্চনার প্রতিটি দিক সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শুধু সূচকের হার জানা যথেষ্ট নয়, এর অন্তর্নিহিত কারণ বোঝাটাও জরুরি। আমাদের প্রতিটি সূচকের গভীরে গিয়ে দেখতে হবে—কীভাবে এবং কেন তা দারিদ্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সমন্বয়ের ঘাটতি ও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা বহুমাত্রিক শিশুদারিদ্র্য মোকাবিলায় দরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করছে।

প্রতিবেদনে বাসস্থান, পয়ঃনিষ্কাশন, ইন্টারনেট, নিরাপদ জ্বালানি ও মানসম্মত শিক্ষা—এই গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে বঞ্চনা হ্রাসে বাস্তবমুখী নীতি ও লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য, ওয়াশ, বিদ্যুৎ, নিরাপদ জ্বালানি ও শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই জাতীয় এমপিআই সূচক বাস্তবায়ন হয়েছে জিইডি, ইউনিসেফ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের যৌথ সহযোগিতায়। এটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকার ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইইউ প্রতিনিধি এডউইন কুককুক বলেন, শিশুদারিদ্র্য মোকাবিলায় সমন্বিত, তথ্যভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হলে আমাদের সবাইকে—সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ ও জনগণকে—একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই সূচক আমাদের সেই ভিত্তি দিয়েছে।

আজকের বাংলা তারিখ

October ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Sep    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  


Our Like Page