অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি-এর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহের রাজিউন)। সকাল ৬টায় ফজরের নামাজ শেষে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নভেম্বর ২৩ তারিখে ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাঁর অবস্থা গুরুতর ছিল।
বিএনপি-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমাদের প্রিয় জাতীয় নেত্রী আর আমাদের মধ্যে নেই। আমরা তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করি এবং সকলের কাছে দোয়া করার অনুরোধ জানাই।” এই সংবাদ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, এবং রয়টার্সসহ বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলো খালেদা জিয়ার জীবন, রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় অবদান নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আল–জাজিরা : আল-জাজিরার প্রতিবেদনে খালেদা জিয়াকে “বাংলাদেশের রাজনীতির এক কেন্দ্রীয় চরিত্র” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাথে ‘ব্যাটলিং বেগামস’-এর মতো দ্বন্দ্বের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। বিবিসি তাঁর উত্থানকে ‘লাজুক গৃহিণী থেকে প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে চিত্রিত করেছে, যা দেশের নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সিএনএন : সিএনএন বিদেশি বিশ্লেষক উদ্ধৃত করে বলেছে, খালেদা জিয়ার দীর্ঘকালীন ‘আর্চরাইভাল’ বাংলাদেশের রাজনীতিকে দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্বের এক প্রজন্মের রাজনীতি নির্ধারণ করেছিল। দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্স জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার মৃত্যু শুধু এক ব্যক্তির শেষ নয়, বরং এক যুগের অবসান, যা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি : এএফপি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার সকালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলীয় বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় নেত্রী খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের নামাজের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ও দেশবাসীকে তাঁর জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিবিসি : বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০ বছরের মধ্যে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপিকে ঐতিহাসিক জয়ের পথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স : বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনাবসান, অবসান হলো এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অধ্যায়ের।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী এই নেত্রীর প্রয়াণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি : বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “গভীর দুঃখ জানাই। খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ তাঁকে “পাকিস্তানের প্রতিশ্রুত বন্ধু” হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেতা মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর মৃত্যুতে বলেন, “খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।” এই প্রতিক্রিয়াগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কভারেজের অংশ হয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মত্যুতে শোক জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা।’ ইসহাক দার আরও লেখেন, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চ স্থান দান করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তওফিক দান করুণ। আমিন।’