18 May 2024, 06:15 pm

বাগেরহাটের রামপালে সৌদি খেজুর চাষে সাফল্য ; কৃষিতে নতুন দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : খেজুর বা খুরমা মানেই সৌদি আরব তথা মরু অঞ্চলের ফল। মরুভূমিতে এর চাষ ভালো হয়। বাংলাদেশে সৌদি খেজুরের গাছ লাগালেও তেমন ফলন হয় না বললেই চলে। তবে এবার উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের লবণাক্ত জমিতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুর চাষ হয়েছে। একইসঙ্গে বাম্পার ফলন হয়েছে। রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা দিহিদার জাকির হোসেন বিদেশি এই ফল চাষ করে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, উপকূলের লবণাক্ত জমিতে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উপকৃত হবেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। অল্প খরচে খেজুর আবাদ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন যে কেউ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ন্যাসী গ্রামে ১৫ বিঘা জমিতে খেজুরের বাণিজ্যিক বাগান গড়েছেন দিহিদার জাকির হোসেন। বাগানে ৪৫০টি গাছ রয়েছে। সবগুলো সারিবদ্ধ। গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে বিভিন্ন রঙের খেজুর। গত বছর অল্প কিছু গাছে ফল এলেও এ বছর ৮০টিতে ছয় থেকে ১০টি থোকায় খেজুর ধরেছে।

গাছ লাগানোর দুই বছরের মাথায় ফলন পেয়েছেন বলে জানালেন দিহিদার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় উপজেলা রামপালের লবণাক্ত মাটিতে তেমন কোনও ফসল ভালো হয় না। এই জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি বারবার। পরে রাস্তার পাশে দেশি খেজুর গাছের ফলন দেখে সৌদির খেজুর চাষের কথা মাথায় আসে। ২০২০ সালে চারা সংগ্রহ করে শুরু করি চাষাবাদ। বাগানে আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহি জাতের ৪৫০টি গাছ আছে। গত বছর কিছু গাছে ফল এসেছিল, এবার ৮০টিতে ফল এসেছে। কোনও কোনও গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। এতটা আশা করিনি।’

এই এলাকায় চিংড়ি ছাড়া অন্য ফসল তেমন হয় না উল্লেখ করে এই চাষি বলেন, ‌‘খেজুরের বাম্পার ফলন আশার আলো জাগিয়েছে। খেজুর চাষাবাদ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে বাগান গড়ে তুলতে পারলে চিংড়ির মতো রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। স্বাবলম্বী হবেন এই অঞ্চলের অনেকে।’

প্রতিদিন বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি উদ্যোক্তারা আসছেন জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘যারা আসছেন তাদের সঠিকভাবে বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছি। অনেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি পিচ চারা গাছ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করছি।’

বাগানের শ্রমিক লাল মাহমুদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে শুনছি মানুষ সৌদি গিয়ে খেজুর বাগানে কাজ করে। সেই খেজুর বাগান দেখার ইচ্ছে ছিল। এখন বাড়ির পাশে খেজুর বাগানে কাজ করে সে ইচ্ছে পূরণ হলো।’

বাগানের আরেক শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘নিজেদের হাতে গড়া এই বাগানে বাম্পার ফলন দেখে মন ভরে উঠেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে বাগান দেখতে এসে মুগ্ধ হন।’

মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তালুকদার নাজমুল কবির ঝিলাম বলেন, ‘সবার কাছে প্রিয় ফল সৌদি খেজুর। রমজান মাসে খেজুর ছাড়া ইফতার যেন অপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান এবং ভারত থেকেও খেজুর আমদানি হয়। এ বছর সন্ন্যাসী গ্রামের দিহিদার জাকির হোসেনের বাগানে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি এই অঞ্চলের কৃষির জন্য নতুন সম্ভাবনা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লবণাক্ত জমির কারণে রামপাল উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় তেমন কোনও ফসল হয় না। একমাত্র চিংড়ি চাষই ভরসা। কিন্তু গত কয়েক বছর চিংড়ির উৎপাদন ভালো নয়। সন্ন্যাসী গ্রামে ১৫ বিঘা জমিতে দিহিদার জাকির হোসেন সৌদি খেজুরের বাগান গড়ে তুলেছেন। এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি এই অঞ্চলের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ইতিমধ্যে জেলাব্যাপী খেজুর চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি আমরা।’

লবণাক্ত জমিতে খেজুরের চাষ হলে একদিকে যেমন পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে খেজুরের উৎপাদন বাড়লে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4678
  • Total Visits: 745053
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1126

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ ইং
  • ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১০ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:১৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018