অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : একবার ভাবুন, খুব কম সময়ে অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েই দেখলেন রাস্তায় বিশাল যানজট। এমন সময় গাড়িতে থাকা একটি বাটনে চাপ দিলেন, আর গাড়িটি মুহূর্তেই হেলিকপ্টার বা উড়োজাহাজ হয়ে গেলো।
আরেকটি বাটন চাপতেই গাড়িটি দিব্যি আকাশ দিয়ে উড়তে শুরু করলো। জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িচালক বা মালিকরা আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেন। পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে, তাই না? তেমনটা মনে হলেও অদূর ভবিষ্যতে বাজারে আসতে চলেছে এমন গাড়ি। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
বেশ কয়েক বছর ধরে স্থল ও আকাশপথে উড়তে পারবে এমন গাড়ি বানানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। সেগুলোর মধ্যে অনেকেই কয়েকটি গাড়ির পরীক্ষা চালিয়েছেন।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে হতে যাওয়া কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক্স শোতে চার চাকার এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি আনতে চলেছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। এরই মধ্যে বিশ্বের নামকরা কিছু সংস্থা এ ধরনের গাড়ি আনার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে আয়োজন করা হয় কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো। যেখানে দেখা যায় নতুন প্রযুক্তির সব যানবাহন। বিশ্বের নানা প্রান্তের গাড়িপ্রেমীরা অধির আগ্রহে এ শো’র অপেক্ষায় থাকেন।
চলতি বছরের এ শোতে একই সঙ্গে রাস্তায় চলতে ও আকাশে উড়তে পারার ক্ষমতাসম্পন্ন সে ধরনের নতুন নতুন অটোমোবাইল আসতে পারে বলে আশা করছেন অনেকে।
জানা যায়, এবারের কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে জার্মান সংস্থা ফক্সওয়াগন বেশ কয়েকটি নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রদর্শন করবে। আরেক বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অডি ভার্চুয়াল ড্রাইভার-অ্যাসিস্ট ব্যবস্থাও আনছে।
তবে এসবের মাঝে সবচেয়ে বড় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে কয়েকটি বৈদ্যুতিক গাড়ি, যা আকাশেও উড়তে পারে। গাড়ি নির্মাতা আরেক প্রতিষ্ঠান আস্কাও একই ধরনের গাড়ি আনার ঘোষণা দিয়েছে।
আস্কা বলছে, রাস্তার পাশাপাশি আকাশেও উড়তে পারবে এমন একটি গাড়ি আনছে তারা। মোট চার আসনের এ গাড়ির উড্ডয়ন ও অবতরণ দেখানো হবে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে।
আস্কার এ গাড়ির একটি পূর্ণ আকারের প্রোটোটাইপ সংস্করণও উপস্থাপন করা হবে, যেটি বৈদ্যুতিক গাড়ির পাশাপাশি কোয়াডকপ্টারের মতো কাজ করবে।
জানা যায়, গাড়িটিতে শর্ট টেকঅফ ও ল্যান্ডিংয়ের কৌশলও রয়েছে। থাকবে রেঞ্জ বাড়ানোর জন্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক সিস্টেম।
আস্কার এ গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ৪০০ কিলোমিটার। আর উড়ন্ত অবস্থায় গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
গাড়িটি হাইওয়েতে ড্রাইভ মোডে ঘণ্টায় কমপক্ষে ১১২ কিলোমিটার গতিতে চালানো যাবে। গাড়ির প্রথম ডেলিভারি হবে স্থানীয় রাস্তায়। তবে ঠিক কবে নাগাদ গাড়িটি বাজারে আসবে, তা এখনও জানায়নি অটোমোবাইল কোম্পানি আস্কা।
এর আগে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশে ওড়ে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি এক্সপেং আইএনসির তৈরি একটি গাড়ি। সেটি অনেকটা ড্রোনের মতো দেখতে ছিল।
গাড়িটির নাম ‘এক্স টু’। দুই আসনের ওই বৈদ্যুতিক গাড়িটি সোজাসুজি মাটি থেকে ওপরে উঠে যায়৷ অবতরণের সময়ও ঠিক একইভাবে মাটিতে নেমে আসে। এটির চার কোনায় দুটি করে মোট আটটি প্রপেলার বা পাখা রয়েছে৷
দুবাইয়ের আকাশে প্রথমবারের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে গাড়িটে মোট ৯০ সেকেন্ড ওড়ে। এটিকে বড় সফলতা হিসেবে দেখছেন এক্সপেং আইএনসির কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এ গাড়ি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।
এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে ফ্লাইং কার উদ্বোধন করে সুইডেন। দেশটির গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি জেটসন অ্যারোর এ উড়ন্ত গাড়ির নাম ‘জেটসন ওয়ান’। এতে মাত্র একটি আসন রয়েছে।
একবারে মাত্র ২০ মিনিট উড়তে পারা এ ফ্লাইং কার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৩ মাইল পাড়ি দিতে পারে। গাড়িটি এরই মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২টি গাড়ি বিক্রি করেছে জেটসন অ্যারো।
এ ধরনের কার তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। স্যামসন স্কাইর তৈরি গাড়ির নাম ‘সুইচব্লেড’। এ গাড়িটিও বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রায় দুই হাজার মানুষ গাড়ির জন্য বুকিং করেছে।
গাড়িটি তৈরি করতে স্যামসন স্কাই ১৪ বছর সময় ব্যয় করেছে। সম্প্রতি গাড়িটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে। এর গতি ঘণ্টায় ৮৭ কিলোমিটার। সূত্র: টেক ওয়্যার এশিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply