অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জনরা ব্রেন ডেড এক রোগীর দুটি কিডনি দুজন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে দুজনের দেহে এই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা ২০ বছর বয়সী রোগী সারা ইসলামের কাছ থেকে কিডনি নেন চিকিৎসকরা।
কিডনি নেওয়ার সময় ওই দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের ডা. অধ্যাপক তৌহিদ মো. সাইফুল হোসেন দিপু।
তিনি একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে আলাপকালে সারা ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। তার এই দানের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে মরণোত্তর অঙ্গ দানে এবং এতে করে লাখ লাখ কিডনি এবং কর্নিয়া রোগী উপকৃত হবে।
মানুষের জন্য নি:স্বার্থভাবে অঙ্গ দানের চিকিৎসায় জড়িত থাকার কথাও জানান এই চিকিৎসক।
প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, ঢাকার বাসিন্দা সারা ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কে টিউমারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার শিক্ষক মা বলেন, সারা মৃত্যুর আগে তার দেহের সবকিছুই দান করে দিতে বলেছেন। তবে তার কিডনি ও কর্নিয়া নেওয়া হয়েছে।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, সারা তিন দিন আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা দেওয়া হয়।
হাবিবুর রহমান জানান, তার কিডনির সঙ্গে ম্যাচ করতে কয়েকজন কিডনি রোগীর তথ্য মেলানো হয়। এর মধ্যে ৩৪ ও ৩৭ বছর বয়সি দুই নারীর সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মিলে যায়। আত্মীয় না হওয়ায় এর বেশি মেলেনি। বাকিটা ওষুধ প্রয়োগে উপযোগী করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউতে কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার দলে আরও ছিলেন হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক কার্তিক চন্দ্র ঘোষসহ ১৫ চিকিৎসক।
উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তি বলতে এখানে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষিত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ‘ব্রেন ডেথ’ অনেক রোগী থাকেন। তারা আর বাঁচেন না। তাদের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ফ্লুইডের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিছুদিন চালু রাখা যায়।
কোনো ব্যক্তি ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষিত হওয়ার পর কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ বা লিভার, অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) ও খাদ্যনালির মতো অঙ্গগুলো দান করলে অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে হৃৎপিণ্ড থেমে গেলেও কর্নিয়া, অস্থি, অস্থিমজ্জা ও চর্ম প্রতিস্থাপন করা যায়। এগুলোকে ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপন বলা হয়।
এমন ব্যক্তিদের কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে দিকনির্দেশনা, তদারকি ও পরামর্শ দেওয়ার কাজ করে ‘ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি’।
বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে জীবিত দাতার কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। তবে ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি নেয়ার বিষয়ে আইনি সীমাবদ্ধতা ছিল। ২০১৮ সালে আত্মীয়দের সম্মতিতে ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে অঙ্গদান আইন সংশোধন করা হয়।
Leave a Reply