অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জলবায়ু কর্মীরা এই গ্রীষ্মে একটি বিলাসবহুল সুপার ইয়টে রং স্প্রে করেছেন, ব্যক্তিগত বিমানের উড়ানে বাধা দিয়েছেন এবং গলফ কোর্সে গর্ত খুঁড়ে দিয়েছেন। অতি-ধনীদের বর্জ্য নির্গমন-সংকুল জীবনযাপনের বিরুদ্ধে প্রচারকে জোরালো করতেই এই পদক্ষেপ।
জলবায়ু নিয়ে আন্দোলন গত কয়েক বছরে জোরালো হয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন যেহেতু বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে এবং এর ফলে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উষ্ণতা, বন্যা ও দাবানল দেখা দিচ্ছে। একে ঠেকাতে কৌশলেও আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। কিছু বিক্ষোভকারী রাস্তায় অবস্থান করছেন, গলফ ও টেনিসের মতো হাই-প্রোফাইল খেলায় বাধা দিচ্ছেন এবং বিখ্যাত শিল্পকর্মেও কালি বা স্যুপ ছিটিয়ে দিচ্ছেন।
তাদের নজর এখন বিত্তশালীদের দিকে। বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক যে সব সংস্থা এখনও জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে তাদের কয়েকটিকে দীর্ঘদিন ধরে নিশানা করা হয়েছে। মূলত, তেল, গ্যাস, ব্যাঙ্ক ও বীমা সংস্থাগুলিকে।
স্পেনের ইবিজা-তে যে বিক্ষোভ হয়েছিল তার সাথে যুক্ত ছিলেন কারেন কিলিন। তিনি এক্সটিঙ্কশন রেবেলিয়ন কর্মী। তার কথায়, “আমরা মানুষের দিকে নয়, বরং তাদের জীবনযাপনের দিকে আঙুল তুলছি। এতে যে অবিচার হচ্ছে তার দিকে।” তিনি আরও বলেন, এই গোষ্ঠী অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য নির্গমনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অতি-ধনী ব্যক্তিরা একটা পিজ্জা আনতে যাচ্ছেন নিজস্ব নৌ-যানে। তিনি বলেন, “জলবায়ুগত আপদকালীন পরিস্থিতিতে এটা নৃশংসতা।” প্রসঙ্গত, ইবিজা হল ধনীদের গ্রীষ্ম কাটানোর প্রিয় জায়গা।
জলবায়ু সংক্রান্ত সক্রিয়তাবাদীদের গোষ্ঠী ফিউচুরো ভেজেতাল বা ভেজিটেবল ফিউচারের কিলিন ও অন্যান্যরা একটি ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সুপার ইয়টে স্প্রে রং লাগিয়ে দিয়েছেন। এই ইয়টটি ওয়ালমার্টের উত্তরাধিকারী ন্যান্সি ওয়ালটন লরির। বিক্ষোভকারীরা একটি সাইনবোর্ড ধরেছিল যাতে লেখা ছিল, “আপনি ভোগ করেন, অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
সুইৎজারল্যান্ডে প্রায় ১০০ জলবায়ু কর্মী জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত বিমান বিক্রয় মেলায় বাধা দেন। সেই সময় তারা নিজেদেরকে বিমান থেকে নামার সিঁড়ি ও প্রদর্শনীর প্রবেশপথে বেঁধে রাখেন। জার্মানিতে জলবায়ু গোষ্ঠী লেজট জেনারেশন, যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় শেষ প্রজন্ম, উত্তর সাগরের সিল্ট নামের রিসর্ট দ্বীপে এক ব্যক্তিগত জেটে স্প্রে রং লাগিয়ে দেয়। স্পেনে সক্রিয়তাবাদীরা গলফ কোর্সে গর্ত খুঁড়ে দেন। রুক্ষ গ্রীষ্মে এই খেলায় প্রচুর জলের ব্যবহার হয়। এরই প্রতিবাদে এমনটা করা হয়েছে।
আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ড্যানা ফিশার বলেন, “বিলাসবহুল জীবনযাপন এই মুহূর্তে জলবায়ু সংকটে অসমভাবে প্রভাব ফেলছে।” অলাভজনক সংস্থা অক্সফ্যাম ২০২১ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রহকে উষ্ণ করে তোলে এমন সমস্ত নির্গমনের জন্য যদি মানুষকে দায়ী করা হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ শতাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী থাকবেন বিশ্বের ১ শতাংশ ধনী। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
Leave a Reply