24 Jan 2025, 02:25 pm

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। শিক্ষার মান আরও উন্নত করে আমরা বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। এটা আমাদের লক্ষ্য এবং এটি অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে।’
আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের জাতীয় কাউন্সিল এবং বৃত্তি বিতরণ-২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে নিরন্তর পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার জন্য তারা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমাদের শিশুরা মেধাবী হওয়ায় বৈশ্বিক শিক্ষার একই গতি বজায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বিভাগীয় সদরে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, এরোস্পেস এবং এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগে দেশে ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তারা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
তিনি বলেন, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারে সে জন্য ‘ন্যানো-টেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করতে আমরা ৩৯টি হাইটেক পার্ক, কম্পিউটার ইনকিউবেশন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেছি।’
শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীকে স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘তরুণদের এমনভাবে শিক্ষা দিন যাতে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।’
তিনি বলেন, আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশের কর্ণধার হবে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দিতে, দেশপ্রেমিক হতে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করতে বলেন।
তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সব ধরনের শোষণমুক্ত একটি স্মার্ট সোনার বাংলায় পরিণত করার মাধ্যমে সবাইকে উন্নত ও অর্থবহ জীবনমান দিয়ে জাতির পিতার ভবিষ্যত কল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশি জনগণের ভাগ্য গড়তে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘ আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ চালিয়ে যাব।’ প্রধানমন্ত্রী ১০ জন অসচ্ছল মেধাবী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তি তুলে দেন।
মোট ১২,৩৯৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১,২৮৫ জন অসচ্ছল মেধাবী এবং ১,১০৯ জন বিশেষচাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী প্রায় ৬,১৯,৭০,০০০ টাকার বৃত্তি পেয়েছেন।
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইসিটি মাস্টার প্ল্যানসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং তালিকায় স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষদের পক্ষে কুমিল্লার সেলিম সোনার বাংলা কলেজের আবু সালেক মোহাম্মদ সৌরভ এবং রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা বক্তব্য রাখেন। দুজন বৃত্তি গ্রহীতা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই দিনে (২০০৭ সালের ১৬ জুলাই) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথমে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল।
তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থার সময় এই দিনে আমাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিন নামের একজন সামরিক কর্মকর্তা তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন- যিনি তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তখন তিনি সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন- তিনি মর্যাদা চান না, নির্বাচন চান- যার মাধ্যমে দেশবাসী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা সেনা সদস্যকে তিনি বলেছিলেন, আমার বাবা দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমার সম্পদ বা বাড়ি-গাড়ির কোন লোভ নেই। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আমি আমার ভাগ্য গড়তে নয়, দেশবাসীর ভাগ্য গড়তেই  দেশে ফিরে এসেছি।’
শেখ হাসিনা তখন আরো বলেছিলেন, তিনি শুধুমাত্র নির্বাচন করতে চান- যা তাদেরকে ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর  থেকে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতায় দেশ অনেক এগিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও ডিজিটাল কানেকটিভিটিসহ সার্বিক উন্নয়নে সাড়ে ১৪ বছর আগের তুলনায় আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে।
তিনি বলেন, ‘১৪ বছর আগের দিকে তাকালে এবং এখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন দেখে বাংলাদেশের তুলনা করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের শেষ জাতীয় বাজেট দিয়েছে মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকার এবং আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শেষ বাজেট দিয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার সবসময় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু শিক্ষায় ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাজেটে শিক্ষাখাতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলেন এবং তাঁর সরকার শিক্ষা খাতে ৮১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পরপরই সারাদেশে ৩৬ হাজার বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর সরকারও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার ছাত্রদের স্কুলে বিজ্ঞানে উৎসাহিত করতে সারা দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। কারণ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় তারা বিজ্ঞানে অল্প কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছিল।
তিনি বলেন, বিদেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার জন্য তাঁর সরকার যে বৃত্তি দিত তা বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) এমনকি স্কুলের জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের কাছ থেকে টিউলিপ ব্র্যান্ডের ১০,০০০ ল্যাপটপ কেনার চুক্তি বাতিল করেছে। টিউলিপ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল হওয়া সত্ত্বেও তারা মনে করেছিল যে, শেখ রেহানা এই কোম্পানির মালিক।
তিনি বলেন, বাতিলের কারণে বাংলাদেশকে আইনি লড়াইয়ে হেরে নেদারল্যান্ড সরকারকে ৬০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষার পথ থেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 3192
  • Total Visits: 1515431
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1698

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২৩শে রজব, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ২:২৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018