24 Nov 2024, 07:44 pm

ভারতের মণিপুরের হিংস্র জনতা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করল মা ও শিশুসহ ৩ জনকে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে হিংস্র জনতা তিনজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এর মধ্যে একজন মা ও তার শিশু সন্তানও রয়েছে।

একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনজন চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন। পথে একদল উন্মত্ত জনতা গাড়িতে হামলা চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ জানায়, আগুন লাগার পর ছাই থেকে শুধু হাড় পাওয়া গেছে। গত রোববার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটলেও এর বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ্যে আসে দু’দিন পর। নিহতরা হলেন ৭ বছর বয়সী  টনসিং হ্যাংসিং,  তার মা মীনা হ্যাংসিং (৪৫) এবং তাদের আত্মীয় লিডিয়া লরেম্বাম (৩৭)।

নিহত তিনজন গত ৩ মে থেকে ইম্ফল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কাংচুপে অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কর্মকর্তার মতে, অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি কুকি পরিবার বাস করছে। বাইরে থেকে মাঝেমধ্যেই গুলি চলছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা কুকিদের বসবাসকারী এলাকাগুলোকে টার্গেট করছে। রোববার এমনই একটি হামলায় শিশুসহ তিনজন আহত হয়েছিলেন।

নিরাপত্তা ক্যাম্পের কর্মকর্তারা ইম্ফল পশ্চিমের এসপি ইবোমচা সিংয়ের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকে আহতদের ইম্ফল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। বিকাল ৫ টা ১৬ মিনিট নাগাদ এসপির তত্ত্বাবধানে রোগী ও নার্স বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্যাম্প ছেড়ে যায়। এ সময়ে অসম রাইফেলসের কেউ তাদের সঙ্গে ছিল না। অ্যাম্বুলেন্সটি অর্ধেক পথ যাওয়া মাত্রই হিংস্র জনতা গাড়িটিতে হামলা চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

অসম রাইফেলস সূত্রে প্রকাশ, তারা রবিবার সন্ধ্যায় পরে জানতে পারে যে এসপির সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং তিনজন নিহত হয়েছে। চালক ও নার্স ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ‘র‍্যাফ’-এর একটি সূত্র বলেছে, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক! এখানকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমরা ইম্ফালে মোতায়েন হওয়ার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ওপর কোনো হামলা দেখিনি।

এই অগ্নিকাণ্ডে যে মা মারা গেছেন তিনি মেইতেই সম্প্রদায়ের, যার বিয়ে কুকি সম্প্রদায়ের একজনের সাথে হয়েছিল। মৃতের আত্মীয় পাওলেনলাল হ্যাংসিং বলেন, আমরা ৩ মে থেকে মেইতেই সম্প্রদায়ের নৃশংসতার সম্মুখীন হয়েছি। তবে রোববারের ঘটনা ছিল সবচেয়ে খারাপ। লাশগুলো পুড়ে গেছে। ছাইয়ের মধ্যে কেবল কিছু হাড় পাওয়া গেছে।

পাওলেনলাল বলেন, তিনি অ্যাম্বুলেন্সে তিনজনের সাথে ছিলেন না, কারণ তিনি একজন কুকি ছিলেন এবং গাড়িটিকে মেইতেই অধ্যুষিত অঞ্চল দিয়ে যেতে হয়েছিল। মীনা হ্যাংসিং এবং লিডিয়া লরেম্বাম খ্রিস্টান ছিল কিন্তু তারা মেইতেই সম্প্রদায়ের ছিল। আমরা ভেবেছিলাম তাদের আক্রমণ করা হবে না। কিন্তু তারাও রেহাই পায়নি। অ্যাম্বুলেন্স হামলায় স্ত্রী ও ছেলেকে হারানো জোশুয়া হ্যাংসিং হতবাক। বর্তমানে তিনি একটি কুকি অধ্যুষিত গ্রামে আত্মীয়দের সাথে বসবাস করছেন।

অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো শিশুটির স্কুলের অধ্যক্ষ এল ওটসি খংসাই বলেছেন, সরকার শান্তির জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিদ্বেষ বেড়েছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি জানি না।

শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধার জন্য ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়কে ‘তপশিলি উপজাতি’ মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টা হলে গত ৩ মে থেকে ‘কুকি’ ও ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান মোতায়েনের পাশপাশি স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ কার্যকর থাকলেও সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14109
  • Total Visits: 1295039
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৭:৪৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018