অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন সরকার যে অবস্থায় দেখতে চায় পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিকে তার ঠিক বিপরীত অবস্থায় রয়েছে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো।
প্রতিরোধ অক্ষ যুদ্ধ-বিরতির আলোচনার সাফল্যকে নিজের বৈধ দাবিগুলো পূরণের ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করছে। হামাস যখন এরই ভিত্তিতে যুদ্ধ-বিরতিকে স্বাগত জানাচ্ছে তখন দখলদার ইসরাইল মার্কিন সরকারের বিরতিহীন সহায়তা নিয়ে আলোচনাগুলোকে বিকল করে যাচ্ছে।
মিশরের রাজধানী কায়রোতে যুদ্ধ-বিরতির আলোচনা ছিল দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার মতই নৈরাশ্যজনক। আলোচনার ফলাফল তথা যুদ্ধ-বিরতিতে মতৈক্য অচলাবস্থার শিকার বলে খবর আসছে।
মধ্যস্থতাকারীরা বিশেষ করে মিশর ও কাতার নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে মধ্যস্থতার কাজ অব্যাহত রাখলেও ইহুদিবাদী ইসরাইল যুদ্ধ-বিরতির আলোচনায় নিজের অনমনীয়তার বিষয়ে মার্কিন সহায়তার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ায় নানা টালবাহানা অব্যাহত রেখেছে আরও বেশি ছাড় আদায়ের লক্ষ্যে। হোয়াইট হাউজ পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা হ্রাসের পক্ষে রয়েছে বলে দাবি করলেও নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির মোকাবেলায় কঠোর বা আন্তরিক নয়। ফলে নেতানিয়াহু পরিণতি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই যা-খুশি-তা করছে এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সে নতুন নতুন অপরাধযজ্ঞের ময়দান তথা নতুন নতুন যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলছে। ইসরাইলি সেনারা গত কয়েক দিনে পশ্চিম-তীরের উত্তরাঞ্চলে তুলকারাম, জেনিন ও তুবাসের নানা শিবির বা ক্যাম্পে এমন তীব্র আগ্রাসন শুরু করেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন তীব্র আগ্রাসনের নজির নেই এই অঞ্চলগুলোতে।
ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াসরাইল কাত্জ এইসব আগ্রাসী অভিযানের অজুহাত হিসেবে সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের দমনের কথা উল্লেখ করেছে। সশস্ত্র এই ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলো জর্দানের ভূমির মাধ্যমে ইরানের পক্ষ থেকে মদদপুষ্ট ও সশস্ত্র হচ্ছে বলে কাত্জ্ দাবি করেছে। এই দানবীয় ঘাতক খুব স্পষ্টভাবে বলেছে যে পশ্চিম তীরেও গাজার মতই সব পদক্ষেপ নেয়া ইসরাইলের জন্য জরুরি।
অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে পশ্চিম তীরকে নিয়ন্ত্রণের ধারায় এবং গাজায় প্রতিরোধ অক্ষ জোরদারের প্রেক্ষাপটে ইসরাইল পূর্ব ফিলিস্তিনের স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর চালানো প্রাত্যহিক অপরাধযজ্ঞ সেন্সর করতে এ দাবি প্রচার করত যে পশ্চিম-তীর হচ্ছে দখলদার বসতি-স্থাপনকারী ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক আদর্শ দৃষ্টান্ত!
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান নামক অভিযান পরিচালনার আগে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ চালানো হত নীরবে। এ অঞ্চলে ইসরাইলের নতুন আগ্রাসন ও কাত্জ্-এর অশুভ ইচ্ছার প্রকাশ প্রমাণ করেছে যে গাজা ও পশ্চিম তীরের ব্যাপারে ইসরাইলি অশুভ লক্ষ্যগুলোতে কোনো পার্থক্য নেই। ইসরাইল শান্তি ও আপোষের কথা বলে শব্দ নিয়ে খেলা করেছে মাত্র এবং এইসব প্রতারণাময় শব্দের আড়ালে আরও ব্যাপক মাত্রায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও দখলদারিত্বকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছে।
গত ১১ মাসে পশ্চিম তীরে হাজার হাজার ব্যক্তি শহীদ ও আহত হয়েছে ইসরাইলি দখলদার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা- ইসরাইলি আগ্রাসনের এক অলীক ও অবাস্তব অজুহাত মাত্র যাতে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের নামে সব অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে যেতে পারে ইসরাইল। এটা স্পষ্ট যে পশ্চিম-তীরে ইসরাইলি আগ্রাসন ও শহীদদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এই ১১ মাসে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ পশ্চিম-তীরে বাস্তবে নিষ্ক্রিয় থেকেছে কিংবা কখনও ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের সহযোগী হয়েছে। পশ্চিম-তীর বসবাসের আদর্শ মডেল –এমন স্বপ্ন এই দিনগুলোতে ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে সবচেয়ে প্রতিরক্ষাহীন অবস্থায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম-তীরে রাজনৈতিক সমাধানের অস্থায়িত্ব এমন এক সংকট যা গাজায় যুদ্ধ-বিরতির পথে বাধা-বিপত্তিগুলোরও অংশ হয়ে উঠতে পারে।
গাজায় যুদ্ধ-বিরতির মাধ্যমে ইসরাইল যেসব বাড়তি সুবিধা পেতে চায় সেই অবস্থা একই কায়দায় পশ্চিম তীরেও সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই অঞ্চল ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ বন্ধ হবে না।
ইসরাইল যেভাবে নতুন নতুন ফ্রন্ট খুলে উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে তাতে ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলো ও আরব মধ্যস্থতাকারী সরকারগুলোও নিরব থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন সরকার ইরানে নানা দূত পাঠিয়েছে এবং আঞ্চলিক যুদ্ধ ঠেকানো ও উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সতর্কবাণী বিনিময় করেছে। এরই মধ্যে ইসরাইল উত্তেজনা জোরদার করেছে যার দায়ভার মার্কিন সরকারের ওপর ন্যস্ত।
মার্কিন সরকার যে অবস্থায় দেখতে চায় পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিকে তার ঠিক বিপরীত অবস্থায় রয়েছে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো। প্রতিরোধ অক্ষ যুদ্ধ-বিরতির আলোচনার সাফল্যকে নিজের বৈধ দাবিগুলো পূরণের ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করছে। হামাস যখন এরই ভিত্তিতে যুদ্ধ-বিরতিকে স্বাগত জানাচ্ছে তখন দখলদার ইসরাইল মার্কিন সরকারের বিরতিহীন সহায়তা নিয়ে আলোচনাগুলোকে বিকল করে যাচ্ছে।
ময়দানে পরিস্থিতি বা বাস্তবতা স্পষ্ট হচ্ছে। লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ এরিমধ্যে ইসরাইলে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে অপারেশন চল্লিশা বা আরবাইন নামে (ইমাম হুসাইন আ’র শাহাদতের চল্লিশা-বার্ষিকীর প্রাক্কালে)। আর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার বদলা নেয়ার জন্য ইরানের সম্ভাব্য অভিযান ফিলিস্তিনে ও এ অঞ্চলে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সরকারের লাগামহীন সহায়তার সমীকরণকে বদলে দিতে পারে। তা না হলে রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলোর ব্যর্থতা, ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং সময় ইসরাইল ও মার্কিন সরকারের অনুকূলে ব্যয় হতে থাকার বিষয়ও হয়ত আমরা দেখতে পাব।
Leave a Reply