অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করে একটি নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ। সেই মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিককেও। গত ২ নভেম্বর মহম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তবে, মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনাস্থলের বর্ণনার সঙ্গে সাক্ষীদের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি।
এতে বিএনপির নেতাকর্মীসহ ১৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামি পাঁচ সাংবাদিক হচ্ছেন- দৈনিক ইত্তেফাফের উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সহসভাপতি মো. মেহেদী হাসান ওরফে পলাশ, খবরের আলো পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. ওহাব বিশ্বাস, লোকসমাজ ও দৈনিক জনতার উপজেলা প্রতিনিধি মো. তরিকুল ইসলাম তারা, নিউ নেশন পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক মাস্টার এবং ভোরের দর্পণ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের প্রচার সম্পাদক মো. রাসেল মিয়া ওরফে রাসেল মোল্যা।
এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও মো. তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতা করেন।
রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি এক আত্মীয়কে চিকিৎসক দেখাতে ফরিদপুরে অবস্থান করছিলেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনার দিন যশোরে ছিলেন।
ওহাব বিশ্বাস বলেন, “আমার বয়স এখন ৭৬ বছর। একসময় রাজনীতি করতাম। সেটা প্রায় ৪০ বছর আগে। এখন শুধু সাংবাদিকতা করি। মামলায় আসামির তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত হয়েছি।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পুলিশ খবর পায়, ১ নভেম্বর রাতে অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নাশকতা কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কে ধোয়াইল আদর্শ নূরানী হাফেজি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে জড়ো হয়েছেন।
“পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএনপি ও সমমনা দলের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করে। জব্দ করা হয় বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত হাতবোমার সদৃশ কৌটা, জালের কাঠি, বাঁশের লাঠিসহ বিভিন্ন বস্তু।”
মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ধোয়াইল গ্রামের মো. হাফিজুর রহমান, মো. বাবুল শেখ ও তার ভাই মো. কাবুল শেখকে।
জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “১ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টার দিকে পরপর তিনটি শব্দ শুনতে পাই। ঠিক দুই থেকে তিন মিনিট পরই পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পাই। আমরা সাধারণ মানুষ, ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ঘর থেকে না বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
“কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে আমাদের রাস্তায় ডেকে নিয়ে যায়। আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে বিএনপির লোকজন এসে বোমা ফাটিয়েছে, দেখেছেন কি-না। আমি বলি আমরা ঘরে শুয়ে ছিলাম, এসব কিছু দেখিনি। এর বেশি কিছু জানি না।”
প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকো বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে থানায় কথা বলেছি। তারা আমাদের বলছেন, ওসি সাহেব নতুন আসছেন, সবাইকে ঠিকমত চেনেন না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নাম এসেছে।”
প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন নবী ডাবলু বলেন, “এজাহারে ঘটনার সময় বলা হয়েছে রাত পৌনে ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা। কিন্তু রাত ২টার সময় আমাদের সভাপতির কাছে ফোন এসেছে ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আবার এই মামলায় পেশাদার সাংবাদিকদের কীভাবে আসামি করা হল, এটাও বোধগম্য নয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার ওসি বোরহানউল ইসলাম বলেন, “মামলায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে এ নামগুলো এসেছে। তারা সাংবাদিক কিনা জানি না। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পেলে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।”
Leave a Reply