April 5, 2025, 10:02 pm
এইমাত্রপাওয়াঃ
আমাদের সাইটে নতুন ভার্ষনের কাজ চলছে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

মাঠ রাজনীতির খেলোয়াড় বিদেশী —-এম এ কবীর (সাংবাদিক)

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী কর্মসূচী দিচ্ছে সেটা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। বিদেশীরা কে কী বলছে এটা নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি। আর রাজনীতির মাঠ বাংলাদেশের হলেও সব খেলোয়াড় বিদেশী।

বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘ বাংলাদেশ বৃহৎ শক্তিগুলোর খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এটা ব্যাটেল গ্রাউন্ড হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ক্রসফায়ারে পড়ে যেতে পারে। এর জন্য দায়ী বর্তমান সরকার।

এরই মধ্যে রাজনীতির মাঠে হাজির সেন্টমার্টিন দ্বীপ। রাশেদ খান মেনন সংসদে সেন্টমার্টিনের সাথে সরাসরি আমেরিকাকে যুক্ত করলেও প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশের নাম যুক্ত না করেই বলেছেন- সেন্টমার্টিন লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই। দেশের কোনো সম্পদ বিদেশীদের দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চান না তিনি। অন্যদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। সেন্টমার্টিনসহ বাংলাদেশের কোনো জায়গা তারা চায়নি। সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ‘সেন্টমার্টিন’ লিজ দেয়া না-দেয়ার আলোচনা দেশের মানুষকে অসম্মান করার শামিল। রাজনৈতিক নেতারা দেশের জনগণের প্রতি আস্থা রাখার বদলে বিদেশিদের কূটচালের জালে বাঁধা পড়তেই যেন বেশি আগ্রহী। তাঁদের বক্তব্য থেকে এ কথা ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে জনগণের মতামত (ভোট) নয়, ক্ষমতার পালাবদলে ভিনদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে দেনা-পাওনার সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের জন্য এ ভাবনা লজ্জা, অপমান ও অমর্যাদার। একই সঙ্গে দেশের জনগণের প্রতি অনাস্থারও প্রকাশ।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল অব. শহীদুল হক বলেছেন-‘ বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা সবার জানা। আর চীন হচ্ছে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কথা বলে। ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের কথায় মার্কিন নীতির প্রতিফলন আছে। তারাও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেছেন, ‘‘দেশের সাধারণ মানুষেরও যতটা তৎপর বা প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন ততটা হচ্ছে না। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই কথা বলছে। ফলে সব দিকেই একটা প্রবণতা বাইরে থেকে কেউ কিছু একটা করে দেবে।’

আসামিকে সঙ্গে নিয়ে অপারেশনে বেরিয়েছিল আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী। এ সময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা তার সহযোগী দুর্বৃত্তরা হামলা করে, গুলি চালায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় বহু মামালার আসামী দুধর্ষ সন্ত্রাসী কানা বাবুল। ক্রসফায়ারে মানুষ খুনের এই প্রায় অবিকৃত গল্পে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কোনো প্রশ্ন নেই। গল্পটা শুনতে শুনতে যতই কান ঝালাপালা এবং মনপ্রাণ ত্যক্ত-বিরক্ত হোক আম পাবলিকের কিছুই বলার ছিল না ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমেরিকার স্যাঙ্কশন জারির আগ পর্যন্ত। কিন্তু নিজের তৈরি অসত্য গল্প অদৃশ্যের পরোক্ষ ইঙ্গিতে কিভাবে আত্মবিনাশী অমোঘ সত্য হয়ে দাঁড়ায় সেই দৃষ্টান্ত সবার জানা ঈশপের মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পে।

ক্রসফায়ার নিয়ে জনগণ গল্প শুনেছিলো। এখন একটু ভিন্নভাবে পুরো বাংলাদেশই কখন যেন দুই বা তিন বৃহৎ শক্তির ক্রসফায়ারের শিকারে পরিণত হবার হুমকিতে পড়েছে। বিষয়টি আকস্মিক নয় অভাবিতও নয়। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে। বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে এক ধরনের খুশি খুশি আবহও দেখা যাচ্ছিল বিশেষ মহলের কথাবার্তায়। বিশ্বের একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র যখন থেকে তার মনোযোগ এশিয়ার দিকে নিবদ্ধ করতে শুরু করে তখন এটি স্পষ্ট হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ামুখী দৃষ্টির মূল কারণ চীনের উত্থান ঠেকানো। এ জন্য দেশটি কোয়াড,ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ইত্যাদি নানামুখী কার্যক্রম নিয়েছে। দেশটি বাংলাদেশকেও এসব উদ্যোগে পাশে পেতে চায়। অন্য দিকে চীনেরও লক্ষ্য বাংলাদেশের সমর্থন আদায়। আর সীমান্তের সবদিক ঘিরে থাকা ভারত তো আছেই। বাংলাদেশে ভারত, চীন,আমেরিকা সবারই স্বার্থ আছে। তবে এই স্বার্থের প্রকৃতি ও আদায়ের প্রক্রিয়া ভিন্ন।

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা যে চাপ দিচ্ছে তা সহজ করতে ভূমিকা রাখছে চীন-রাশিয়া অক্ষশক্তি। তারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার গোটা অর্থনীতির অস্তিত্বের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বৃহত্তম অংশ আমদানি করে। শুধু এই একটি পণ্য রফতানি বন্ধ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে খানখান হয়ে যাবে। আর গণতান্ত্রিক বিশ্বের অংশ হিসাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার বাক-স্বাধীনতা, জনগণের নেতৃত্ব বেছে নেবার অবাধ সুযোগ বিদ্যমান থাকবে এটা এ দেশের উন্নয়ন সহযোগীরা চাইতেই পারে। সে হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা নিচ্ছে তা আপাতদৃষ্টিতে চাপ বলে মনে হলেও তা উড়িয়ে দেবার মতো নয়। নয় বলেই বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বিষয়ে বিশেষ রূপরেখা প্রকাশ করতে হয়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে বলে মৌখিকভাবে হলেও ঘোষণা দিতে হয়।

ছয়জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়ে তাদের ভাষায় ‘বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে এবং দেশটির জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নেয়ার সর্বোত্তম সুযোগ করে দিতে জরুরি উদ্যোগ’ নেয়ার আহ্বান জানান।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা দখলে রাখতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও কারাবন্দি করছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট সদস্যদের বিবৃতি বা চিঠি আরো জোরালো।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব এ দেশের কৌশলগত অবস্থানের কারণে। বঙ্গোপসাগরের এমন একটি জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান যেটি ভারত মহাসাগর হয়ে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের রুট হিসাবে বিশ্ব অর্থনীতির জীবনরেখা। ভারত মহাসাগর এবং এর বিভিন্ন উপসাগর দিয়ে আফ্রিকার সাথে চীনের বেশির ভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। এ ছাড়াও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে এই অঞ্চলে উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টাও করছে চীন। এর অগ্রগতি ইদানীং চোখে পড়ার মতো। কারণ বিশ্বের বহু দেশ এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে এবং হচ্ছে।

গত এক বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের উপর্যুপরি সফর যেমন দেখা গেছে তেমনই সব ইতিহাস ভেঙে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গভীর রাতের সফরও নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা,নতুন ভিসানীতি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কংগ্রেস সদস্যদের চিঠি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট সদস্যদের চিঠি ইত্যাদি সেই সূত্রে গাঁথা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের তৎপরতা থেকে অনেকের অনুমান, তাদের মূল লক্ষ্য একটি নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য তাদের চিঠিতে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের বিষয়টি খোলাখুলিই বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে চীনের দিকে ঝুঁকে থাকার নীতি অবলম্বন করেছে। সে কারণে নিজেদের প্রভাব সুসংহত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে এ দেশের আসন্ন নির্বাচনকে একটি সুযোগ হিসেবে নিতে হচ্ছে। কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। আর বাংলাদেশ এই চাপ অগ্রাহ্য করার নানা কৌশল খুঁজছে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের সাথে গভীর সম্পর্কের সূত্রে।

শক্তিমান দেশগুলোর দ্ব›েদ্বর এই মঞ্চটি হয়তো শিগগির টালমাটাল হয়ে উঠবে। সেই প্রক্রিয়াই এখন দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট পাস, আর চীনের হঠাৎ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে উদগ্রীব হয়ে ওঠার মধ্যে রেসলিং মঞ্চ সম্প্রসারণের ইঙ্গিতও স্পষ্ট। আর এই মঞ্চে বাংলাদেশ খেলুড়ে হিসাবে অংশ নিচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.শাফী মো.মোস্তফা ‘দ্য ডিপ্লোমেট’ পত্রিকায় লিখেছেন, পরাশক্তিগুলোর এই কাছে টানার প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বাংলাদেশ দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব,অর্থনৈতিক সঙ্কট, সরকারের বৈধতার সঙ্কট, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দেশটির স্বাধীন ও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তার পরও যে বাংলাদেশ ‘কারো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করার’ বিশাল আওয়াজ মাঝে মাঝেই তুলছে তার ব্যাখ্যা কী? একটি ব্যাখ্যা হতে পারে হারার আগেই হার না মানার কৌশল। দ্বিতীয়ত গভীর সম্পর্কের ওপর অত্যধিক ভরসা। বর্তমানে দেশে একদিকে ডলার ও জ্বালানিসংকট, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত; এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে আরেকটি সংঘাতময় পরিস্থিতি জনজীবনে মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে।

লেখক : এম এ কবীর, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সভাপতি ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি।

আজকের বাংলা তারিখ

April ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Mar    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  


Our Like Page