অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সাধারণ বইয়ের সঙ্গে নিজ নিজ ভাষার বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। নতুন বছরের প্রথম দিন আজ রবিবার তাদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রি ভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পড়াশোনার জন্য বই বিতরণ করছে সরকার। জেলায় এ বছর ৭০৭টি প্রাথমিক ও ১৪০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক বই দেওয়া হয়েছে। মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধূরী।
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হলেও রাঙামাটিতেও বই বিতরণে রয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি শিক্ষার্থীদের হাতে নিজ নিজ ভাষার বই দেওয়া হয়েছে। বই উৎসবকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে বিদ্যালয়ের আঙিনা। বই হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তারা নতুন বই পেয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে। সাধারণ বইয়ের সাথে নিজের ভাষার বই হাতে পেয়ে তাদের খুশি আরও বেড়েছে।
রাঙামাটি বনরুপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল চাকমা ও তুলতুল চাকমা বলেন, ‘আমি আমার চাকমা ভাষার বই পেয়েছি। আমি খুব খুশি। কারণ বই থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি।’
অভিভাবক জ্ঞান প্রিয় চাকমা বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজ ভাষায় কথা বলতে পারলেও লিখতে পারতাম না। এই উদ্যোগের ফলে আমাদের শিশুরা বলার সঙ্গে সঙ্গে লেখাও শিখছে। এর ফলে আমাদের ভাষা বিশ্বের বুকে হাজার বছর টিকে থাকবে।’
রাঙামাটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র থেকে জানা গেছে, জেলায় ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১০ উপজেলার ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিশু বই উৎসবের মধ্য দিয়ে তিন লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি নতুন বই পাবে। প্রাক-প্রাথমিক, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শতভাগ বই পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য চাহিদা ছিল প্রায় ৬০ হাজার, এর মধ্যে বই পাওয়া গেছে ৪৫ হাজার ৫১টি বই। বাকিগুলো আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বই পাওয়া যাবে। এছাড়া চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ জন শিশুকে ৬৬ হাজার ২৫০টি মাতৃভাষার বই শতভাগ বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুল কান্তি তালুকদার জানান, জেলায় এ বছর বইয়ের চাহিদা ছিল ৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৪৩টি। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫১টি বই। এখনও শতকরা ৪২ ভাগ বই পাওয়া যায়নি। কখন পাওয়া যাবে সেটা জানাতে পারেননি তিনি।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, ‘আজ একসঙ্গে প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক, সব বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ বইয়ের পাশাপাশি পার্বত্য এলাকায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার বই বিতরণ করা হচ্ছে। মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য নিজ নিজ ভাষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত আছে।
Leave a Reply