অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ওয়াশিংটনের নীতি বিনা বাক্যে মেনে নেয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকার আরব দেশগুলো, আয়ারল্যান্ড, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো, ইরান, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, ইরাক, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ছাড়াও আরো অন্যান্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপ অব্যাহত রয়েছে।
এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্বর ইসরাইলের অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজকে নীরব রাখা এবং ইসরাইল বিরোধী তৎপরতা রোধে আন্তর্জাতিক জোট গঠন করা।
যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লিপনা ফিলিস্তিনিদের অধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পথে বড় বাধা, তাই অন্যান্য সরকার বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে একটি মধ্যমমানের শক্তির জোট গঠন করে সম্মিলিতভাবে মার্কিন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার পদক্ষেপ নেয়া।
দ্রুততম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হল ইসরাইলের সাথে সমস্ত কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোর ওপর আমেরিকা চাপ দিতে চাইলে তা ওয়াশিংটনের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে।
যদি এ দেশগুলো মধ্যমশক্তির একটি জোট গঠন কোরে সম্মিলিতভাবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘেষণা দেয় তাহলে আমেরিকার হুমকি ধমকি ও নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজে আসবে না। কেননা এসব বিরোধিতা উপেক্ষা করলে আমেরিকাকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, তুরস্ক, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চিলি, মিশর, মরক্কো, স্পেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ নিয়ে এ ধরনের জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। অন্যান্য শক্তিগুলোও এই পদক্ষেপে যোগ দিতে পারে এবং আমেরিকার ওপর চাপ বাড়াতে পারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তাদের সবাইকে ঠেকানো সম্ভব হবে না।
সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ আরো অন্যান্য দেশ যারা ইসরাইলের সাথে কোনো কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে এমন দেশগুলোও এই জোটে যোগ দিতে পারে। অন্যান্য শক্তিগুলোও এই পদক্ষেপে যোগ দিতে পারে এবং আমেরিকার ওপর চাপ বাড়াতে পারে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তাদের সবাইকে ঠেকানো সম্ভব হবে না।
এভাবে সাম্রজ্যাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তৎপরতার সূচনা করা যেতে পারে। এমনকি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বেলজিয়ামসহ আরো অন্যান্য দেশ যারা বোঝে যে জোট গঠনের এই পদক্ষেপ সঠিক, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমেরিকাকে তারা ভয় পায় এবং সে কারনে জোরালোভাবে এ জোটে তারা যোগ নাও দিতে পারে। কিন্তু তারা অন্তত ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
যদিও এসবের কোন পন্থাই সহজ হবে না, তবে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনকারীরা এবং লেখকরা তাদের সরকারের কিসে কল্যাণ হবে সে সম্পর্কে সতর্ক করা উচিত যাতে তাদের এই ধরনের জোট গঠনের জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সরকারকে বোঝাতে পারে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করতে পারলে তথাকথিত গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার জন্য আরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। যদিও উপরে উল্লিখিত বেশ কয়েকটি দেশ বিশ্বাস করে যে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশার বিষয়টি উপেক্ষা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো বিরোধ এড়াতে পারে, কিন্তু এ ধরনের চিন্তাভাবনার ফলাফল হবে খুবই স্বল্পমেয়াদী।
এ ব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে তারা মার্কিন ক্রোধ হয়তো আপাতত এড়াতে পারবে কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা ভবিষ্যতে অন্য কোনো ইস্যুতে মার্কিন ক্রোধের সম্মুখীন হবে না। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এ ধরণের একটি মধ্যমমানের শক্তি বা জোটের পক্ষে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অনুগত হয়ে চলা মোটেও সম্মানের নয় এবং নিজেদের স্বার্থও রক্ষিত হবে না। এমনকি এটি সাময়িকভাবে উপকারী হলেও, শেষ পর্যন্ত এর জন্য তাদেরকে মূল্য দিতে হবে। তারপরও কেউ কেউ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার কী দরকার?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য এখন বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে এ সুযোগটি কাজে লাগানোর এবং জোট শক্তিকে কাজে লাগানোর, যাতে সত্যিকারের এমন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে বিশ্বকে চালিত করা যায় যেখানে সকলের জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের উচিত বর্তমান সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিক জনমতকে কাজে লাগানো এবং সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া উচিত যে, আমেরিকার চাপিয়ে দেয়া আধিপত্যবাদী আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক নির্দেশনা আর মেনে নেয়া হবে না, আর সহ্য করা হবে না।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে এর অন্যথায় বিশ্ব অঙ্গন থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হবে। আমরা যখন সেই পর্যায়ে পৌঁছে যাব, তখন আমরা ইসরাইলি অবৈধ বসতি স্থাপনের অবসান দেখতে পাব। এইভাবে আমরা বর্ণবাদ ও গণহত্যার অবসান ঘটাতে পারি যা কিনা দখলদার ইসরাইলের মারাত্মক দুটি অস্ত্র।
ইসরাইল একবার বিশ্বঅঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, তারা তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে এবং ইসরাইলিদের অবৈধ বসতি স্থাপন প্রকল্প বন্ধ করা ছাড়া তাদের অন্যকোনো উপায় থাকবে না।
ইসরাইল ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধ এই ধরনের পদক্ষেপের ফলাফল শুধু যে ফিলিস্তিনি এবং স্থানীয় ইহুদিদেরই উপকার করবে তাই নয় একই সাথে এটাও প্রমাণিত হবে যে মার্কিন সাম্রাজ্য এখন আর আগের মতো নেই এবং আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের মানুষ একটি সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। এটা এমন এক বিশ্বব্যবস্থা যা আর কোনো পরাশক্তির আঙ্গুলের ইশারায় চলবে না।
একটি গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা বড় যুদ্ধ, সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র এবং ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনকে অনেক কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে এবং আজ ফিলিস্তিনিরা যে বিরাট মানবিক সংকটের সম্মুখীন তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ফিলিস্তিনি জনগণ ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে সন্ত্রাসবাদ ও জুলুম নির্যাতনের মুখোমুখি তা শুধু ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না এবং এখানেই এর শেষ নয়। এই ধরনের দুর্ভোগ এড়ানোর উপায় হল আরও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা একবার বলেছিলেন, ‘আমরা খুব ভালো করেই জানি যে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ।’
তাই এখন সময় এসেছে যে বাকি বিশ্বকে এই মূল্যবান বক্তব্যের অর্থ সত্যিকারভাবে বুঝতে হবে এবং সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
Leave a Reply