অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়া বলছে, এ নীতিমালা তাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত ওই নথিতে ইউরোপ সভ্যতা বিলুপ্তির মতো হুমকির উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মূল’ স্বার্থ হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পরিবর্তিত নীতির অনেক অংশই রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ‘মিল খুঁজে পাওয়া যায়’। তিনি নথিতে ন্যাটোকে ‘ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল জোট’ হিসেবে দেখার প্রবণতা কমিয়ে আনার যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিকেও স্বাগত জানান। ন্যাটো সম্প্রসারণকে রাশিয়া বরাবরই নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হিসেবে দেখে আসছে।
তবে পেসকভ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ডিপ স্টেট’—যে শব্দটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায়ই ব্যবহার করেন—তাদের অবস্থান নতুন কৌশল নথির সঙ্গে পুরোপুরি মিলবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক কৌশল নথিগুলোতে রাশিয়াকে শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ওয়াশিংটনের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ, আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করা—এসবই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকদের মত।
হোয়াইট হাউসের মধ্যস্থতায় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ প্রেক্ষাপটে জেলেনস্কি সোমবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সঙ্গে চারপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেবেন।
জেলেনস্কি বারবার ইউরোপীয় অংশীদারদের দৃঢ় সমর্থন চাইছেন, বিশেষ করে তখন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভকে সীমান্ত ছাড়ের প্রস্তাব বিবেচনা করতে বলছেন।
নতুন নিরাপত্তা কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রস্থলে রাখা হয়েছে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলকে। এটিকে ‘অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখ করে তাইওয়ান প্রণালীতে সংঘাত প্রতিরোধে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় নিঃসঙ্গ রাশিয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে।
ট্রাম্প গত মার্চে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমার কাছে একটি জিনিস স্পষ্ট, তা হলো রাশিয়া ও চীনকে একত্র হতে দেওয়া উচিত নয়।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই নথি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক কাঠামো বদলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আলোকে আন্তর্জাতিক মিত্রতা নতুনভাবে সাজানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এতে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইউরোপের ‘পশ্চিমা পরিচয়’ রক্ষায় এবং ‘সভ্যতার বিলুপ্তি’ ঠেকাতে—যে ভাষা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের অতিদক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক বয়ানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে বিশ্লেষকদের মত।