অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণে ২ বছর বয়সী এক ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই শিশুর নাম উড্রো বান্ডি এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় বসবাস করে। মগজ খেকো এই অ্যামিবা নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত।
পানিতে খেলা করার সময় শিশু উড্রো এই অ্যামিবার সংক্রমণের শিকার হয়েছিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের বরাত দিয়ে শুক্রবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেগেলেরিয়া ফাউলেরির সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় দুই বছর বয়সী এক ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এটিকে সাধারণত ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’ বলা হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার (১৯ জুলাই) মারা যায় সে।
সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অ্যাশ স্প্রিংসের পানিতে খেলার সময় আমিবার এই সংক্রমণ তার শরীরে অনুপ্রবেশ করেছিল’ বলে উড্রো বান্ডির পরিবার বিশ্বাস করে। হৃদয়বিদারক এই খবরটি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ছেলেটির মা।
ফেসবুকে মিসেস ব্রায়ানা জানান, ‘উড্রো টার্নার বান্ডি রাত ২টা ৫৬ মিনিটে স্বর্গে আমাদের বাবার কাছে ফিরে গেছে। সে ৭ দিন লড়াই করেছিল। রেকর্ড অনুযায়ী, নেগেলেরিয়া ফাউলেরিতে সংক্রমিত হয়ে কোনো ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বেঁচে ছিলেন তিন দিন। আমি জানতাম, পৃথিবীতে আমার ছেলেই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ‘সে ছিল আমার নায়ক এবং আমাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো বাচ্চা দেওয়ার জন্য আমি চিরকাল ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এছাড়া কোনো একদিন আমি আমার এই ছেলেটিকে স্বর্গে পাবো জেনে আমি কৃতজ্ঞ।’
বান্ডি পরিবারের বন্ধুদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ছেলে শিশুটি গত সপ্তাহে ‘ফ্লু-এর মতো লক্ষণ’ প্রদর্শন করলে বিষয়টি তার পরিবারের নজরে আসে। পরে তার মা ব্রায়ানা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসা কর্মীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন, উড্রো বান্ডির হয়তো মেনিনজাইটিস হয়েছে।
পরে তারা তার মস্তিষ্কে মারাত্মক অ্যামিবার সংক্রমণ রয়েছে বলে শনাক্ত করেন। মস্তিষ্ক খেকো এই অ্যামিবা চলতি বছরের শুরুতে ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়েছিল। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নেগেলেরিয়া ফাউলেরিতে সংক্রমিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিও প্রাণ হারিয়েছিলেন।
নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দুই দিন আগে মিসেস ব্রায়ানা ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) দুই বছর বয়সী এই শিশুটিকে কোনো ধরনের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, সে ‘ইতোমধ্যেই এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যেখান থেকে তার বেঁচে থাকার সুযোগ নেই’।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান এই সরকারি সংস্থা তার অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি।
সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, নেগেলেরিয়া ফাওলেরি হলো এক ধরনের অ্যামিবা (এককোষী জীবন্ত জীব) যা হ্রদ, নদী এবং উষ্ণ প্রস্রবণের মতো উষ্ণ মিঠা পানির পরিবেশে পাওয়া যায়। অ্যামিবাযুক্ত পানি নাক দিয়ে চলে গেলে এটি মস্তিষ্ককে সংক্রামিত করতে পারে এবং তাই এটি ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা নামেও পরিচিত। এই ধরনের রোগ বিরল হলেও প্রায় সবসময়ই এটিকে মারাত্মক বলে মনে করা হয়।
নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত এই অ্যামিবা নাক দিয়ে মস্তিষ্কে সংক্রমিত হয়ে থাকে। কর্মকর্তারা বলছেন, তবে পানির মাধ্যমে এটি পান করা বিপজ্জনক নয়। দূষিত পানি নাক দিয়ে না উঠলে মানুষ আক্রান্ত হয় না।
নেগেলেরিয়াযুক্ত পানির সংস্পর্শে আসার এক থেকে ১২ দিনের মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। সিডিসি অনুসারে, সংক্রমণের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার এক থেকে ১৮ দিনের মধ্যে আক্রান্ত লোকেরা মারা যায়। এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, খিঁচুনি এবং/অথবা হ্যালুসিনেশন।
চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, অ্যামিবা সাধারণত সুইমিং পুল, হ্রদ এবং পুকুরের মতো উষ্ণ মিষ্টি পানিতে বাস করে। এটি নাক দিয়ে প্রবেশ করলে মানুষের মস্তিষ্কে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে, তবে এটি সাধারণত মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে সেটিকে নিরাপদ বলেই মনে করা হয়। কারণ পাকস্থলীর অ্যাসিড একক কোষের এই অণুজীবকে মেরে ফেলে।
সিডিসির পরিসংখ্যান বলছে, শীতের মাসগুলোতে এই অ্যামিবার সংক্রমণ অবিশ্বাস্যভাবে বিরল। কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, সংক্রমণ এড়াতে লোকেদের তাদের নাকের ভেতরের অংশ অপরিশোধিত কলের পানি দিয়ে ধোয়া বা পরিষ্কার করা উচিত নয়।
এক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত বা ডিস্ট্রিল্ড পানি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া ট্যাপের পানিও ব্যবহার করা যেতে পারে যদি এটি কমপক্ষে এক মিনিট সিদ্ধ করা হয় বা ফোটানো হয় এবং ব্যবহারের আগে ঠান্ডা করা হয়।
একইসঙ্গে সুইমিং পুলে সাঁতার বা গোসল করার সময় বা ঝর্ণার পানি ব্যবহার করার সময় নাকের ভেতরে পানি না দিতেও লোকদের সতর্ক করা হয়ে থাকে।
Leave a Reply