ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের উপর দমন–পীড়ন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদাহরণ
অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, গতকাল (রোববার) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটি দুইটি অংশে বিভক্ত—
১. জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন
২. আন্তর্জাতিক ও সীমান্তপারের মানবাধিকার লঙ্ঘন
যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন : প্রতিবেদনের প্রথম অংশে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মোট ৮টি অধ্যায় রয়েছে। এতে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেমন:
দ্বিতীয় অংশে (আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন) ৪টি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
একটি অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ সামরিক আক্রমণে অংশ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার সুরক্ষার দাবি করে, বাস্তবে দেশটির অভ্যন্তরে সরকার যে নীতি অনুসরণ করে তা এসব দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেশটির আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য, বন্দিদের অবস্থা, নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে নজরদারি ও গোপনীয়তা লঙ্ঘন—সবই ওয়াশিংটনের ভণ্ডামিপূর্ণ মানবাধিকার দাবিকে প্রকাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় ও পুরোনো দৃষ্টান্ত হলো বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্য। আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতি আচরণ, বন্দিদের অবস্থা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ—সবকিছুই প্রমাণ করে যে ওয়াশিংটনের মানবাধিকার রক্ষার দাবিগুলো ভুয়া ও প্রতারণামূলক।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্য দীর্ঘদিনের এক গভীর সংকট। দেশটির ইতিহাস থেকেই স্পষ্ট, বর্ণবাদ আমেরিকার সমাজ-রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। পাশাপাশি, দেশে ক্রমবর্ধমান সহিংস অপরাধ ও অস্ত্র ব্যবহারের সংস্কৃতি নাগরিকদের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার অর্থাৎ নিরাপত্তার অধিকার, সেখানে বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
আরেকটি গুরুতর দিক হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব ও গোপন তথ্য ফাঁসকারী নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতেও অমানবিক অবস্থা বিরাজ করছে; বিপুল সংখ্যক বন্দি এবং কঠোর জীবনযাপনের চিত্র বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের বাইরে মানবাধিকার লঙ্ঘন : প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসজুড়েই অন্য দেশে সামরিক হামলা, বেসামরিক হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির বিদ্যমান।
ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে মার্কিন আগ্রাসন এবং গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা লাখো নিরপরাধ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
আবু গারিব ও বাগরাম কারাগারের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, তথাকথিত ‘ড্রোন হামলা’র নামে বেসামরিক হত্যাযজ্ঞ, এবং গুয়ানতানামো বে-তে অভিযোগহীন অনির্দিষ্টকালের আটক—সবই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়া, বিশ্বব্যাপী নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক গুপ্তচরবৃত্তি ও নজরদারি কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন : যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হিসেবে যুক্তরাজ্যেরও মানবাধিকার রেকর্ড কালো ইতিহাসে ভরা, বিশেষ করে উপনিবেশবাদী আমলে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদনের প্রথম অংশে (জাতীয় পর্যায়) ১২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে:
দ্বিতীয় অংশে (আন্তর্জাতিক ও সীমান্তপারের মানবাধিকার লঙ্ঘন) দু’টি প্রধান শিরোনাম এসেছে:
১. বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন– যেমন বিপজ্জনক পদার্থ, নিষিদ্ধ কীটনাশক ও বর্জ্য রপ্তানি, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চনা ইত্যাদি;
২. গাজায় গণহত্যায় অংশগ্রহণ ও সমর্থন।
প্রতিবেদনটি বলছে- যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নিজেদের মানবাধিকারের রক্ষক দাবি করলেও, তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি ও আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে। ইরানের মতে, এসব দেশ মানবাধিকারের নীতি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। প্রকৃত মানবাধিকার রক্ষায় দ্বৈত মানদণ্ড পরিহার করে সবার জন্য সমান ন্যায় নিশ্চিত করাই মূল চ্যালেঞ্জ।