22 Nov 2024, 12:30 am

রঙিন ফুলকপি চাষে সফল টাঙ্গাইলের আরশেদ আলী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কৃষক আরশেদ আলী। বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা পৌর এলাকার ছাব্বিশা গ্রামে। নিজ বাড়ির আঙিনার ৩৩ শতক জমিতে প্রতি বছর নানা ধরণের সবজি চাষাবাদ করে থাকেন তিনি। এবার সেই জমির অর্ধেকাংশে তিনি স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষ করে চমক দেখিয়ে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। আরশেদ তার এ অল্প জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার প্রয়োগে চার রঙের ফুলকপি চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন।

কৃষক আরশেদ আলী এ উপজেলায় এবারই প্রথম পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহ প্রকাশ করছে স্থানীয় তরুণ ও যুবকসহ অনেক সবজি চাষি। এছাড়া তার এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক জনতা। রঙিন ফুলকপি দেখতে এসে কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন, কেউ রঙিন ফুলকপির সঙ্গে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করছেন। রঙিন ফুলকপির সাফল্যে খুশি স্থানীয় কৃষি বিভাগও।

রঙিন ফুলকপি চাষি আরশেদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর স্যারের পরামর্শে ও কৃষি অফিস থেকে নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির ৪০০ চারা, জৈব সার, পোকাদমন কীটনাশকসহ সব ধরণের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশে মাত্র ১৫ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। এতে ৪ রঙয়ের ফুলকপি রয়েছে। ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক-সার ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জমিতে চারা রোপণের ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে জমিতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফসল পেয়েছি। মজার ব্যাপার হলো এসব রঙিন ফুলকপি দেখতে প্রতিদিনই এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ আমার জমিতে আসছেন ফুলকপি দেখার জন্য। কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ তুলছেন ছবি, করছেন ভিডিও। তাছাড়া বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায় এসব রঙিন কপি। দামও ভাল পাচ্ছি।

পৌর এলাকার কতুবপুর মহল্লার ভূট্টাচাষি মাহমুদুল হাসান। রঙিন ফুলকপি চাষের খবর পেয়ে এসেছিল ফুলকপি দেখতে। কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, রঙিন ফুলকপির নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু স্ব-চোখে দেখতে পারিনি। যখনি জানতে পারলাম পাশের গ্রামে আরশেদ আলী নামে একজন কৃষক রঙিন ফুলকপি চাষ করেছে এ খবরে ফুলকপি দেখতে আসছি। চাষি আরশেদ থেকে রঙিন ফুলকপি চাষ সম্পর্কে জানলাম। আগামীতে আমিও এই রঙিন ফুলকপি চাষ করব আশা করছি।

রঙিন ফুলকপি ক্রেতা রফিকুল ইসলাম রবি ও আব্দুর রহিম মিঞাসহ জেলার গোপালপুর, কালিহাতী ও ঘাটাইল থেকে লোকজন দেখতে আসেন রঙিন ফুলকপি। তাদের সাথে কথা বললে রফিকুল ও রহিম মিঞা জানান, এ ধরণের রঙিন ফুলকপি এরআগে কখনো দেখেনি। উপজেলা কৃষি অফিসার ড. হুমায়ূন কবীরের ফেসবুকে পোস্টে রঙিন ফুলকপির ছবি দেখে কপি ক্ষেতে গিয়ে ৫০ টাকা পিস দরে একটি করে ফুলকপি ক্রয় করি।

জানা যায়, চীনে এ জাতের ফুলকপি সালাত হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও খুব সুন্দর। আমাদের দেশে অর্ধ সিদ্ধ করে খাওয়া খুবই উপযোগী। অন্যান্য ফুলকপির চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়। খরচ ও পরিশ্রমও একই। পাশাপাশি শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়। স্থানীয় হাটবাজার রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর জানান, উপজেলায় এই প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন কেউ আগ্রহী ছিল না। পরে আরশেদ আলী নামে এক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে কৃষি অফিস থেকে ৪০০ ফুলকপির চারা, জৈব সার, পোকারোধক কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৪ রঙয়ের ফুলকপি চাষ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাসার জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করণের লক্ষে জেলার ১২ উপজেলাতে পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারমধ্যে সবার আগে ভূঞাপুর উপজেলায় সফলতা পাওয়া গেছে। এ জাতের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। ক্যান্সাররোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এ ফুলকপি। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেক কৃষক আগামী বছরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 6346
  • Total Visits: 1263524
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১২:৩০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018