23 Nov 2024, 04:31 pm

রাজশাহীতে ভাগনেকে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন বিএনপি নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রাজশাহীতে বিএনপির এক নেতা তার অটোরিকশাচালক ভাগনের গাড়িতে হেরোইন রেখে তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেন। ভাগ্নে এখন কারাগারে। এরইমধ্যে পুলিশের তদন্তে ঘটনার পেছনের এই ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।

ভুক্তভোগী অটোরিকশাচালকের নাম বাবর আলী ওরফে ছবি (৫০)। রাজশাহীর পবা উপজেলার নতুন কসবা গ্রামে তার বাড়ি। তার মামার নাম আবদুল হাই টুনু (৬৯)। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিজয়নগর গ্রামে তার বাড়ি। তিনি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।

ভাগনেকে ফাঁসানোর অভিযোগে পুলিশ এরইমধ্যে টুনু ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। তারা আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

গ্রেফতার অন্য দুজন হলেন মামলার এক নম্বর সাক্ষী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার গুড়িপাড়া এলাকার সানোয়ার হোসেন ওরফে মান্নান (৩১) ও দামকুড়া থানার গোবিন্দপুর এলাকার মো. মোমিন (২৮)। টুনুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা বাবরের অটোরিকশায় হেরোইন রেখেছিলেন। এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত আরও একজন পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ৫ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দামকুড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর আকন্দ পবার হরিপুর এলাকা থেকে অটোরিকশাসহ বাবর আলীকে গ্রেফতার করেন। বাবর আলীর অটোরিকশার সিটের নিচে তখন ১০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায়। এ নিয়ে এসআই আলী আকবর একটি মামলা করেন। মামলার পর বাবর আলীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদত আলী অন্য ঘটনা খুঁজে পান।

এরপরই বাবর আলীকে ফাঁসানোর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত তার মামা আবদুল হাই টুনু, সানোয়ার হোসেন মান্নান ও মো. মোমিনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তারা বাবর আলীকে ফাঁসানোর কথা স্বীকার করেন। এরপর ১১ জুন তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।

ওইদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সার্বিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেন। এতে তদন্ত কর্মকর্তা লেখেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ভিন্নরূপ তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য আসামি বাবরের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানতে তার বাসায় গেলে কোনোরকম বিরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি। সিডিএমএস যাচাই করেও তার বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলাও দেখা যায়নি। বিষয়টি সন্দেহজনক হলে মামলার সাক্ষী সানোয়ার হোসেনের কললিস্ট যাচাই করা হয়। এতে সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া যায়। তাই তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি জানান, বাবর আলীর সঙ্গে তার মামা আবদুল হাই টুনুর জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। তাই টুনু তার ভাগনেকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতে সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে ৫২ হাজার টাকার চুক্তি করেন।

চুক্তির পর সানোয়ার তার পরিচিত মোমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং হেরোইন কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা দেন। পরিকল্পনা মাফিক মোমিন ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ৪ জুন গিয়ে বাবর আলীর বাড়ির বাইরে অটোরিকশার সিটের নিচে হেরোইন রেখে আসেন। এরপর ৫ জুন সকালে মোমিনের সহযোগী মো. রাহাত (২৩) নামের আরেক যুবক ফোন করে বাবরকে অটোরিকশা নিয়ে আসতে বলেন। এসময় রাহাত অসুস্থতার ভান করে সানোয়ারকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বাবরের অটোরিকশায় ওঠেন। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

পথে পুলিশ অটোরিকশা তল্লাশি করে। এসময় হেরোইন পাওয়া গেলে বাবরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর সানোয়ার ২০ হাজার টাকা দেন মোমিনকে। আর নিজে নেন আরও পাঁচ হাজার টাকা। এভাবে ভাগনেকে ফাঁসান মামা। অভিযুক্ত টুনু জমি জালিয়াত চক্রের একজন হোতা। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই পাঁচটি মামলা চলমান বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাবর আলীর স্ত্রী আফরোজা খাতুন চান্দু জানান, ১০ জন অংশীদারকে বঞ্চিত করে ৪০ বিঘা জমি ভোগদখল করছেন বিএনপি নেতা টুনু ও তার তিন ভাই। এজন্য তার স্বামী বাদী হয়ে জমি বণ্টনের মামলা করেছেন। এই মামলা যেন পরিচালনা করতে না পারেন, সেজন্য তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেন টুনু। বাবর এখন কারাগারে।

তিনি আরও জানান, তার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার পরে তিনি রাজশাহী নগর পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা জোনের উপ-কমিশনার বিভূতিভূষণ ব্যানার্জির কাছে যান। তিনি সবকিছু শুনে তদন্ত কর্মকর্তাকে সঠিকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিলে আসল রহস্য বের হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আলী আকবর আকন্দ দাবি করেন, অটোচালক বাবরকে যে ফাঁসানো হয়েছে তা তিনি জানতে পারেননি। পরে রহস্য বের হয়ে এলে অন্য তিন আসামিকে গ্রেফতারে তিনিই সহযোগিতা করেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদত আলী বলেন, বাবর আলী নির্দোষ। অভিযোগপত্র থেকে তাকে বাদ দেওয়া হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9647
  • Total Visits: 1278940
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৪:৩১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018