অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৫তম দফা নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ বাস্তবায়নে একটি ঐক্যমতে পৌঁছানোর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া ভেটো দেয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৫তম ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের বিরুদ্ধে লাটভিয়া এবং লিথুনিয়া ভেটো দেয়ার পর মস্কোর ওপর আরও চাপ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা অন্য একটি তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। পার্সটুডে অনুসারে, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরে কিয়েভকে সমর্থন করতে এবং রাশিয়ার উপর চাপ দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সাল থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে।
রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে এই নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজগুলো রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর বেশি জোর দিয়েছে। এই বিষয়ে,ইউরোপীয় দেশগুলো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার তেল ট্যাঙ্কারের বহরকে লক্ষ্য করে একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ প্রস্তুত করে যাতে রাশিয়ার উপর আরো চাপ বাড়ানো যায়। নতুন ইইউ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের খসড়া প্রস্তাব অনুসারে ব্রাসেলস আরও ট্যাঙ্কারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চেয়েছিল। এর ফল নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রুশৃ ট্যাঙ্কারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫। তবে এই ইউনিয়নের দুই সদস্য লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার বিরোধিতার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের বৈঠকে এই প্যাকেজটি অনুমোদিত হয়নি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছরেরও বেশি সময় পরে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা একদিকে রাশিয়ার উপর ইউরোপের চাপ বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠেছে এবং অন্যদিকে জ্বালানি ইস্যুত এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও বিরোধকে তীব্রতর করে তুলেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলো যারা কয়েক দশক ধরে তাদের তেল এবং গ্যাসের চাহিদার একটি বড় অংশ রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করে আসছিল ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে টার্গেটকে করা এসব নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর জন্য কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে পেতে অক্ষমতার কারণে ইউরোপের কিছু দেশের তীব্র জ্বালানি সংকট থাকার কারণে চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে এই ছাড় রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার পথ খুলে দিয়েছে। অতএব নতুন নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ ঘোষণার সময়ও এই দেশগুলো তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি করলে আলোচনা ব্যর্থ হয়।
প্রকৃতপক্ষে, যখন ইউরোপীয় দেশগুলো একই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে তখন সমস্ত চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রি থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে।
এই প্রসঙ্গে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিয়ার্তো কিছুক্ষণ আগে এক বক্তৃতায় বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ’র বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা কোনোভাবেই ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে সাহায্য করবে না এবং রাশিয়ার চেয়ে ইউরোপীয় অর্থনীতির বেশি ক্ষতি করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বুদাপেস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা নীতিকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে বলে মনে করে।”
ইউরোপীয় দেশগুলো যারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েক দশক ধরে অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র ইস্যুতে এই ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য এবং অভিন্নতা ধরে রাখার নীতি প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা ভিন্ন পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে নয় বরং অভিবাসন নীতি, গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত এবং ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও মতের তীব্র পার্থক্য রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের ব্যাপারে লাটভিয়ার মতো দেশগুলোর বিরোধিতা এই ক্ষেত্রে সর্বশেষ ঘটনা।
এই বিষয়ে মনে হয় যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পার্থক্য আগের চেয়ে আরও তীব্র হয়েছে এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ আর ইউরোপের স্বার্থ ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিতে ইচ্ছুক নয়। এখন ১৫তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ আরোপের বিরুদ্ধে দুটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের অবস্থান সম্বলিত এই প্যাকেজটি আগামী ১৬ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পরবর্তী বৈঠকে আবার আলোচনা হতে চলেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো মনে করছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন ১৫তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজেরৃ ব্যাপারে একটা ঐক্যমতে তারা পৌছাতে সক্ষম হবেন এবং অন্যদিকে এই নিষেধাজ্ঞার বৃত্তকে সংকুচিত করে এমন কোনো অনুরোধকে আমলে নেয়া অসম্ভব বলেই মনে করছেন তারা।
Leave a Reply