04 Feb 2025, 03:54 am

সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানালেন তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলার পরামর্শ দেন তিনি।

বুধবার (০১ নভেম্বর) সচিবালয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী।

‘রাজনীতির নামে এই সন্ত্রাস কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিক, সম্পাদক, গণমাধ্যম মানুষের ধ্যান-ধারণা তৈরি করে’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির হামলায় ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছে এবং তাদের ওপর হামলার ভয়াবহতা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা কী রকম ছিল, সেটি সারা দেশের জনগণ জানে না। এটা জানানোর দায়িত্ব আপনাদের। এর ওপর প্রত্যেকটি পত্রিকায় রিপোর্টিং হওয়া দরকার যে, এতজন সাংবাদিক এভাবে নির্যাতিত হয়েছে। পুরো পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে এটা হারিয়ে গেছে। সে কারণে এই রিপোটিংটা ধারাবাহিকভাবে হওয়া দরকার।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বিশৃঙ্খল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চলছে এবং গত ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহরে বিএনপি সমাবেশের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। কার্যত রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, হাসপাতালে, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা আগে কখনও ঘটেনি। রাষ্ট্রের ওপর এই হামলাকারীরা চিহ্নিত, তারা বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মী। এটাকে নিছক রাজনীতি বলে এর দায় আমরা এড়াতে পারবো না, ঐতিহাসিকভাবে ভুল হবে।’

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন সাপ পিটিয়ে মারার চেয়েও জঘন্যভাবে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডেমরায় ট্রাক ও বাসের সঙ্গে ঘুমন্ত হেলপারদেরও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর পরে হরতাল-অবরোধ ডেকেও তারা যানবাহন ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা পরিচালনা করেছে, দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গত কয়েক দশকেও পৃথিবীর কোথাও রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানো হয়নি। অথচ আপনারা টেলিভিশনে দেখেছেন— একজন গাড়ির মালিক বিলাপ করে করে বলছেন যে, ‘বউ, আমার গাড়িটা জ্বালাইয়া দিছে।’ বিএনপির যে দুষ্কৃতিকারী গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছে তার বুকের বেল্টে ‘প্রেস’ লেখা ছিল। এভাবে সাংবাদিকদের মানহানি বা অ্যাবইউজ করা হয়েছে। এটার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে। এবং জনমত তৈরি করতে হলে এগুলো লিখতে এবং বলতে হবে। বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিবৃতি দিয়েছে, সবারই দেওয়া প্রয়োজন।’

আমি আশ্চর্য হয়েছি যে, কথায় কথায় যারা মানবাধিকারের কথা বলে, সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়, কারও গালে একটা ঘুষি পড়লো সে জন্য বিবৃতি দেয়, এখন তাদের কোনও বিবৃতি দেখি নাই। তারা যে এখন নিশ্চুপ আছে, সে জন্য আপনাদের বিবৃতি দিয়ে মনে করিয়ে দিতে হবে— ‘হোয়াই আর ইউ সাইলেন্ট’। আপনাদের সম্মিলিতভাবে চিঠি লেখা দরকার— তোমরা এখন নিশ্চুপ কেন। সেই চিঠি আবার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা দরকার।’’

মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব সাংবাদিক হামলা-নির্যাতন-নির্মমতার শিকার হয়েছে, যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয়, সংশ্লিষ্ট হাউজ থেকে মামলা করতে হবে। পাশাপাশি কোনও হাউজ যদি চায়— আহত সাংবাদিকদের তালিকা দিলে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আমরা চিকিৎসার জন্য সহায়তা করবো।’

দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘২৮ তারিখে অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছে, গণমাধ্যমের গাড়ি ও যানবাহনও ভাঙচুর হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ, পুলিশকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা, হাসপাতালের ওপর আক্রমণ, সেগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণকে আমরা মনে করি, সংবাদপত্রের এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে আক্রমণ। ভীতিপ্রদ পরিবেশ সৃষ্টি করে সুস্থ সাংবাদিকতা হতে পারে না।’

দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া কিন্তু নতুন কিছু নয়। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন জাতীয় প্রেসক্লাবে আক্রমণ করে প্রায় ৫০-৬০ জন সাংবাদিককে আহত করেছিল। বিএনপি সাংবাদিকদের ওপর যে আক্রমণ করেছে, যে নৃশংসতা এবং সন্ত্রাস করেছে— তাতে আমরা নাগরিক হিসেবে চরম উদ্বিগ্ন ও তাদের নিন্দা জানাই। বিএনপির সব হামলার ঘটনা একত্রিত করে পুস্তিকা প্রকাশ প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে আছি, শুধু দাবি হলো— আমরা যেন নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারি।’

সভায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মোহম্মদ আলী, ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, ভোরের ডাকের সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন, বাংলাদেশ বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন, আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল আলম, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, সংবাদ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিমন মাহফুজ, প্রতিদিনের সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশের আলোর সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, বাংলাদেশ টুডের সম্পাদক  জোবায়ের আলম, ডেইলি পিপলস লাইফের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর বিরুদ্ধে তাদের লেখনি অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 1782
  • Total Visits: 1543604
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1698

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ২১শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ৪ঠা শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৩:৫৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018