November 12, 2025, 8:09 pm
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহে দুইদিন ব্যাপি কৃষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন আগামী বছর হজ করতে পারবেন সাড়ে ৭৮ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্মি সার্ভিস কোরকে প্রস্তুত থাকতে সেনাপ্রধানের আহ্বান আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দিল দ. কোরিয়া গত অক্টোবরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মতবিনিময় সভা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নাকফুল- আংটি-বদনা ফিরে পেলেন বাগেরহাটের শ্রাবণী বাগেরহাটের চিতলমারী ও মোল্লাহাটে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার চাঁদপুরে পাঁচটি পাইপগানসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার
এইমাত্রপাওয়াঃ

সর্বনাশা গড়াই কেড়ে নিয়েছে ঝিনাইদহের পাঁচ‘শ পরিবার ভিটেমাটি

এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ। কখন যেন সর্বনাশা গড়াই কেড়ে নেয় শেষ সম্বল ভিটেমাটি। তাদের অনেকে হারিয়েছেন ফসলি জমি। এখন অন্যের জমিতে কাজ করে চলে সংসার।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়ুরিয়া গ্রাম। মধ্যপাড়ায় প্রবেশ করতেই গড়াই নদীপারে বসে থাকতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব কয়েকজন মানুষকে।

তাদের মধ্যে একজন জাহাঙ্গীর মন্ডল। তিনি বলছিলেন, ‘আমার ১০ বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের যে অবস্থা, তাতে মনে হয় ভিটেবাড়িও এ বছর ঠেকাতে পারব না।’ সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীরের মতো ভাঙন আতঙ্ক পুরো গ্রামের মানুষের মধ্যে। তারা জানান, গত জুন মাসের শুরুর দিকে ভাঙন শুরু হয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা তীব্র হয়েছে। ধান,পাট,কলা, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের জমি বিলীন হচ্ছে নদীতে। বাদ যাচ্ছে না গাছপালা,বাগান,ঘরবাড়িও।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেলা জিও ব্যাগ স্রোতের তীব্রতার কারণে কাজে আসছে না। অনেক বাসাবাড়িও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙনে অনেকে সহায়সম্বল হারিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় গড়াই নদীর বহমান অংশ ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বড়ুরিয়া গ্রামে ১ দশমিক ৫০, কৃষ্ণনগরে ১, মাদলা এলাকায় ১ দশমিক ৫০ ও মাঝদিয়াতে ১ কিলোমিটার এবং গোসাইডাঙ্গা ও লাঙ্গলবাঁধ এলাকায় ৫০০ মিটারসহ ছয় কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ।
ভাঙনের তীব্রতা বেশি বড়ুরিয়ার দেড় কিলোমিটার অংশে। প্রতিবছর গড়ে ৫ মিটার বা ১৫ ফুট করে নদীতে বিলীন হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আরও বেশি পরিমাণ জমি গিলে খাচ্ছে এই নদী। ১৯৬২ সালের পর থেকে ভাঙন হলেও গত ২০ বছরে তীব্রতা বেড়েছে। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী, ১ হাজার ৪৫৭ বিঘা ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং ১৪৩ বিঘা সরকারি খাসজমি বড়ুরিয়া মৌজায়। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২৫০ বিঘায়। গ্রামে অন্তত ৭০০ পরিবার ছিল। তাদের অনেকে অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছেন। ৫০০ পরিবার গ্রাম ছাড়ায় এখন ২০০-এর মতো আছে।

গ্রামের মোমেনা খাতুন এক ছেলে নিয়ে থাকেন গড়াইপারে বাবার জমিতে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল নদীর ওপারে। ভাঙার কারণে এখন এপাশে চলে এসেছি। এটিও এ বছর থাকবে কিনা জানি না। অন্য কোথাও বাড়ি করব, সে জমিও নেই। গ্রামের মানুষের কষ্টের কথা ভেবে সরকার যেন ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়।’

নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গণেশপুর আদর্শ গ্রাম। এপারের জমি ভেঙে ওপাশে জেগে ওঠা চরের জমিতে কুষ্টিয়ার মানুষ যেতে দেয় না বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। চর উদ্ধারেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ ও ২০২১ সালে প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। চলতি বছর ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে ১৭৫ কেজি ওজনের বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ১ জুন শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে। ১৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে চার ধাপে।

বড়ুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুন্দরী খাতুনের পরিবারের প্রায় ৩০ বিঘা জমি ছিল। এখন তা কমে ১০ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা মনি মোল্লা বলেন, প্রায় ১৪০০ বিঘা জমি চলে গেছে। বাবুল মোল্লার কথায়, এপাশে ভেঙে ওপারে চর জেগেছে। সেগুলো খোকসার মানুষের দখলে। প্রশাসনও এ জমি উদ্ধারে উদ্যোগ নেয় না।

বর্ষার শুরুতে ভাঙন রোধে অস্থায়ী সমীক্ষার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস। তিনি বলেন, আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে কাজ চলবে। এরপর স্থায়ী কাজ করা হবে বরাদ্দের ভিত্তিতে। নদীর এ অংশ অবতল হওয়ায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পলি সরে ভাঙন দেখা দেয়।

শৈলকুপার ইউএনও স্নিগ্ধা দাস জানান, গড়াই নদীর সীমানা নির্ধারণে জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র পাঠানো হয়েছে। কুষ্টিয়ার দিকে জেগে ওঠা চরের জমি উদ্ধার এবং সেখানে যেন শৈলকুপার মানুষ চাষাবাদ করেতে পারে, সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের বৈঠকের পর জরিপ করে সীমানা নির্ধারণে জরিপ অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। বিধিসম্মতভাবে উদ্যোগ নিলে নদীপারের সমস্যা থাকবে না।

আজকের বাংলা তারিখ

November ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Oct    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০


Our Like Page