অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা বদলে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন আগেই পাস হয়েছিল। সোমবার থেকে তা চালু হয়েছে দেশটিতে।
অবশ্য চালু করার আগে এই আইনগুলো নিয়ে আরও বেশি আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল বলে জানিয়েছে বিরোধীরা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই আইন নিয়ে বলেছেন, এর ফলে ভারতে ফৌজদারি বিচারের গতি আগের চেয়ে অনেকটাই দ্রুত হবে। বস্তুত, এই তিনটি নতুন ফৌজদারি আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও।
নাম বদল
নতুন যে তিনটি আইন চালু হলো- তার নাম ভারতীয় ন্য়ায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম। এর আগে এই ধারাগুলো ছিল ব্রিটিশদের তৈরি তিনটি আইনে।
ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (আইপিসি), কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এবং দ্য় ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্য়াক্ট। ব্রিটিশ আমলের এই তিনটি আইন বাতিল করে নতুন এই তিনটি আইন চালু করা হলো।
কী আছে নতুন আইনে
নতুন আইনগুলো পুরোনো আইনের থেকেই তৈরি করা। কিন্তু তাতে বেশ কিছু বদল আনা হয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, প্রথম শুনানির ৬০ দিনের মধ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করতে হবে।
বিচারপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে সাজা ঘোষণা করতে হবে। অর্থাৎ, বিচার প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক দ্রুত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে নতুন আইনে।
নতুন আইন অনুযায়ী, দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করা যাবে। অর্থাৎ, যে অঞ্চলে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, কেবলমাত্র সেই অঞ্চলের থানায় গিয়েই এফআইআর করতে হবে, এমন কোনো নিয়ম আর থাকল না।
যেকোনো পুলিশ স্টেশন যেকোনো অঞ্চলের এফআইআর নিতে বাধ্য থাকবে। পাশাপাশি অনলাইনেও অভিযোগ নথিভুক্ত করা যাবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমন পাঠানো যাবে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে ক্রাইম সিন বা অপরাধ যেখানে সংগঠিত হয়েছে সেই জায়গার ভিডিওগ্রাফি করতে হবে। বস্তুত, ক্রাইম সিনের ভিডিওগ্রাফি এখনো হয়। কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়। নতুন আইনে তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সাত বছরের বেশি সাজা হতে পারে যে অপরাধে, তেমন ঘটনায় ফরেনসিক দলকে ক্রাইম সিনে যেতেই হবে। গণপ্রহার, গণধর্ষণ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের মতো অপরাধের ক্ষেত্রেও ফরেনসিক টিমকে ঘটনাস্থলে যেতে হবে।
এর ফলে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তৈরি হয় জাতীয় ফরেনসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই মুহূর্তে ভারতে ৯টি রাজ্য়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ১৬টি রাজ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হবে।
বিরোধীদের বক্তব্য
কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য, নতুন আইন খুব দ্রুত চালু করা হচ্ছে। এই আইনগুলো নিয়ে আরও বেশি আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এর সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নিয়েও আলোচনা করা দরকার ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য়মন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। তার বক্তব্য়, ‘এই আইনগুলো নিয়ে আরও বেশি পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল।’
তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নতুন আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি একটি অভূতপূর্ব সময়। ভারতে দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে ফৌজদারি আইন। সেই আইনের ঐতিহাসিক সংস্কার হলো।
Leave a Reply