অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের গাজা শাখার শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ওপর চাপ দিচ্ছেন গোষ্ঠীটির সামরিক কমান্ডাররা। সময় যত গড়াচ্ছে, সেই চাপও তত বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহী বিল বার্নস শনিবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আইডাহের সান ভ্যালি শহরে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৈঠকে বিল বার্নস বলেন, ‘সিনওয়ার তার নিজের মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত নন; কিন্তু গাজার বাসিন্দারা গত ৯ মাস ধরে যে নরক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে রয়েছেন, তা জানা সত্ত্বেও যুদ্ধ ইস্যুতে তার অনড় অবস্থান হামাসের কমান্ডারদের একাংশকে তার প্রতি ক্ষুব্ধ করে তুলছে। তারা প্রতিনিয়ত গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে সিনওয়ারের ওপর চাপ দিচ্ছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েরের ভূখণ্ডে হামাস যোদ্ধারা যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল, তার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তবে হামাস যোদ্ধাদের হামলা ও সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান শুরুর পর থেকে সিনওয়ারকে আর দেখা যাচ্ছে না।
সিআইএ’র ধারণা, এই মুহূর্তে নিজের জন্মশহর খান ইউনিসের কোনো একটি ভূর্গস্থ গোপন সুড়ঙ্গে আত্মগোপন করে আছেন তিনি। সেখান থেকেই হামাস যোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৯ মাসের অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমা বর্ষণে রীতিমতো ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় যে পরিমাণ ধ্বংস্তূপ জমেছে, তা পরিষ্কার করতে সময় লাগবে অন্তত ১৫ বছর।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরে সপ্তাহ থেকেই সেখানে যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্রস্তাব ওঠে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে। প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও গত ১ জুন গাজায় তিন স্তরের একডিট যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইসরায়েল সেই প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি জানায়নি, হামাসের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কমান্ডও সম্মতি জানিয়েছে বাইডেনের প্রস্তাবে, কিন্তু তারপরও যে প্রস্তাবটি এখনও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না— তার একটি বড় কারণ ইয়াহিয়া সিনওয়ার। গাজায় তিনি ও তার সমর্থক কয়েকজন কমান্ডাররা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন।
তবে কমান্ডার ও যোদ্ধাদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হতাহত হওয়া থামাতে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সিনওয়ার ও তার অনুগামী কমান্ডারদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন এরাই।
এদিকে গত গাজায় যুদ্ধবিরতি বিষয়ক অগ্রগতি সরেজমিনে দেখতে গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন বিল বার্নস। সেই সফরে যে তেমন আশাব্যাঞ্জক কিছু দেখতে পাননি, তাও স্বীকার করেছেন তিনি।
“এ সংক্রান্ত তৎপরতায় এখনও অনেক শূন্যস্থান বা গ্যাপ আমার চোখে পড়েছে। সেসব পূরণ করতে হবে। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। তবে একবার যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তাহলে তা আমাদেরকে যুদ্ধের চুড়ান্ত অবসানের দিকে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।”
হামাসের গাজা শাখার যে তিন জেষ্ঠ্য নেতা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন তাদের মধ্যে ইয়াহিয়া সিনওয়ার অন্যতম। বাকি দু’জন হলেন হামাসের সামরিক শাখা আল কাসের ব্রিগেডে প্রধান কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ এবং সেকেন্ড কমান্ডার মারওয়ান ইসা। এই তিন জনের মধ্যে মারওয়ান ইসা সম্প্রতি নিহত হয়েছেন।
শনিবারের বৈঠকে বিল বার্নস জানান, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য সিনওয়ারের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে তিনি ধারণা। কারণ কাতারের শাসকগোষ্ঠী জানিয়েছে, হামাস যদি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুমোদন না করে, সেক্ষেত্রে গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাতার ছেড়ে চলে যেতে হবে।
Leave a Reply