এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : কেউ বেঁধেছেন বাশের চাটাই-চরাট (বাঁশ দিয়ে বানানো), আবার কেউ বেঁধেছেন বাঁশ। পাকা ছাদের নিচে এভাবেই চলছে দিনের পর দিন বেচাকেনা।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের প্রধান হাটচাঁদনীটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা হলেও এখনও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ২০১০ সালে একজন চাল ব্যবসায়ী ছাদের একটি অংশ ভেঙে নিহত হলেও হয়নি পুনঃনির্মাণ। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী।
হাটচাঁদনিটিতে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন,বাঁশের চরাট বা বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা, যেন ছাদ বা পলেষ্টার খসে না পড়ে। একসময় পরিত্যক্ত ভবন ঘোষণা করে সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেই সাইনবোর্ডও খসে-খসে পড়ে গেছে। তবু দুর্ভাগা দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।
মিজানুর রহমান বলেন, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর ছাদের একটি অংশ ভেঙে মাথায় পড়ে চাল ব্যবসায়ী অজয় কুমার নিহত হন।
হাটচাঁদনিটির প্রবীণ চাউল ব্যবসায়ী মালেক মালিথা জানান, আজও তারা সকালে বাড়ী থেকে বের হন ঠিকই। কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরবেন কিনা জানেন না, এমনই অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের প্রধান হাটচাঁদনিটির। জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ব্যবসা করছি আমরা। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৮৮ সালে ভবনটি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে ১৫২টি দোকান রয়েছে। যার বেশির ভাগই কাঁচা সবজি, চাল ও মুদি দোকান। এর দুই পাশে রয়েছে আরো দুটি টিনশেড ভবন। ভবন দুটির একটিতে আটা-ময়দা,অপরটিতে মাছ-মাংস বিক্রি হয়। ভবনটি একসময় উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন এটির দায়িত্ব কালীগঞ্জ পৌরসভার।
অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সাথে জানান, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে তাদের। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের বাঁচাতে ছাদের নিচে বাঁশ ও বাঁশের চটা দিয়ে রেখেছে। ভবনের ফাটল ধরা ছাদও বাঁশ দিয়ে প্যালা দিয়ে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভা মেয়র আশরাফু আলম বলেন, ২০১৩ সালে তারা একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। ভবনটি ভেঙে পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply