অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর কার্যকর করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর বৃদ্ধির দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।
তামাক পণ্যের দাম বাড়লে যে এর ব্যবহার কমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি প্রমাণিত। এমতাবস্থায় সিগারেটের নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ৬০ টাকা; মধ্যমস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ৮০ টাকা; উচ্চস্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ১৭০ টাকা ধার্যের দাবি জানানো হয়।
সংগঠন দু’টির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আসন্ন বাজেটে তাদের প্রস্তাবিত তামাক কর বাস্তবায়ন করা হলে দেশে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.৮০ শতাংশ হবে। একই সাথে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৬ তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে; যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
সংবাদ সম্মেলনের প্রধান অতিথি সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, তামাকের ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে তামাকের ব্যবহার নির্মূল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণে সংসদ সদস্যরা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, কার্যকর কর কাঠামো না থাকায় আমাদের দেশে তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যটির দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় সস্তা। ফলে সহজেই সাধারণ মানুষ তামাক সেবন করছেন এবং বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সিগারেটের মতো তামাকপণ্যের জটিল করপদ্ধতি (স্তরভিত্তিক) বাতিল করে সুনির্দিষ্ট করপদ্ধতি কার্যকর করতে হবে; যাতে সবধরনের তামাকপণের দাম বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নেওয়া যায়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, দেশে ১৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ১৮ শতাংশ ধূমপান করেন। আবার কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূপমানের শিকার হন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষায় সব ধরনের তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ তামাক ব্যবহার কমাতে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি পন্থা কার্যকর কর আরোপ। আমাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করে কার্যকর কর আরোপ করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে ১০ হাজার কোটি টাকা; যা বিগত বছরের থেকে ২৮ শতাংশ বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ বাপ্পি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply