স্টাফ রিপোর্টার : ঝিনাইদহ জেলার খাল-বিল, নালা-ডোবা, পুকুর শুকিয়ে চৌচির। গত কয়েকদিনের খড়তাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চৈত্রের শেষে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভয়াবহ সেচ পানি সংকটে পড়েছেন কৃষকরা।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, লোডশেডিং ও পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় সেচ পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। মাঠের পর মাঠ পানি শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। ফলন্ত ধানে পর্যাপ্ত সেচ না দেওয়া গেলে খরায় পুড়ে ধানে চিটা হওয়ায় আশঙ্কায় কাঁপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের। পানির এ দুষ্প্রাপ্যতায় বেড়ে যাচ্ছে সেচ খরচ। ধানে পর্যাপ্ত পানি না দেওয়া গেলে ইরি-বোরো মৌসুমের ধানের লক্ষ্যমাত্র পূরণ করা সম্ভব না বলে মনে করছেন তারা।
গভীর বা অধিক শক্তিশালী সেচ পাম্প দিয়ে কিছুটা পানি পাওয়া গেলে ছোট পাম্প গুলোতে একদমি পানি উঠছে না। স্বাভাবিক সময়ে ১০/১২ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া গেলেও বর্তমানে মাত্র ৩ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় একই অবস্থায় হয়েছে এলাকার নলকূপ গুলোতে। অনেক নলকূপ পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। বেশি ভাগ নলকূপে এখন আর আগের মত পানি উঠে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুর-দুরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করছেন এলাকাবাসী। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ মটরসাইকেলে আবার কেউ বা ভ্যান গাড়িতে করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সারা দিনের চরম খড়তাপ ও ভ্যাপসা গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। সেহেরী, ইফতার কিংবা তারাবির নামাজের সময়ও বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় চরম অসস্তিতে দিনপার করেছেন এ এলাকার মানুষ।
অতিরিক্ত খড়তাপে পুকরের পানি কমে উত্তপ্ত হয়ে পুকরের মাছ লাথিয়ে লাথিয়ে মারা যাচ্ছেন। পুকুরের পাশের সেচ পাম্পে পানি না উঠায় কিছুই করা যাচ্ছে না। এতে করে মুলধন হারিয়ে স্বর্বশান্ত হচ্ছেন বহু মৎসাচাষী।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এবছর এ উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৭৬০ হেক্টর। তবে এভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বৃষ্টি না হলে তা পূরণ করা সম্ভব না।
এবছর মহেশপুরের পাতিবিলা বিলপাড়া মাঠে কৃষক জামির হোসেন ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, পানির অভাবে পুরো মাঠ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির স্তর নিচে নেমে পানি না ওঠা, পর্যাপ্ত ভোল্টেজ ও অতিরিক্ত লোড়শেডিং এর ফলে কোন ভাবেই জমিতে পানি দেওয়া যাচ্ছে। এভাবে আর দুই এক দিন গেলে জমিতে ধানের থেকে চিটার ভাগ বেশি হবে। সেচ পাম্প মালিক আব্দুল লতিফ জানান, পানির স্তর এত নিচে নেমেছে যে পাম্প চালু করে টিউবওয়েল চেঁপে চেঁপে বহু কষ্টে পানি তুলতে হচ্ছে। যেখানে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১০/১২ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া যেত; সেখানে বর্তমানে মাত্র ৩ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে লোডশেডিং।
এদিকে বিদ্যুৎ থাকাকালীন সময় পর্যাপ্ত ভোল্টেজ থাকে না। সেচ পাম্প চালাতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ লাগে ২০০ মেগাওয়ার্ড সেখানে পাওয়া যায় মাত্র ১৪০ মেগাওয়ার্ড। এব্যাপারে বিদ্যুৎ অফিসের সাথে বহুবার যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। খড়তাপে মাঠ শুকিয়ে যাওয়া ও সেচ পাম্পে পানি কম উঠার ব্যাপারটা কৃষকের বুঝানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আরেক পাম্প মালিক মসলেম উদ্দিন জানান, পাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে পাঁচ বারের বেশি মেশিন চালু করেছেন। পানি তোলার ১০/১৫ মিনিটের মাথায় আবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এভাবে গতকাল সারা দিনে তিনি মাত্র ২৫ কাঁঠা জমিতে পানি দিয়েছেন।
এব্যাপার উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বলেন, শুষ্ক মৌসুম তার উপরে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির লেয়ার ২০-২৫ ফিট নিচে নেমে গেছে। যেকারণে সাধারণ নলকূপ গুলোতে পানি উঠছে না। তবে সাবর্মাসবিল পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে। সাবর্মাসবিল ১’শ ফিট পর্যন্ত পানি হাউজিং করে রাখে।
মহেশপুরস্থ ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশনের আবাসিক প্রকৌশলী সেকেন্দার হাসান জাহাঙ্গীর জানান, সেচ মৌসুমে সারা দেশে বিদ্যুতের ভোল্টেজ একটু কম থাকে। তবে যা আছে তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ঘাটতিতে উপরের নির্দেশে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা জানান, অতিরিক্ত খড়তাপ ও অনাবৃষ্টিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যায়ে যদি জমিতে পানি না থাকে তাহলে ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ব্লাষ্ট রোগ দমনে কৃষকদের লিফলেটসহ বিভিন্ন পরামর্শ দ্ওেয়া হয়েছে।
Leave a Reply