অনলাইন সীমান্তবাণী ডস্কে : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, নির্মম ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করে বিচারের জন্য নিয়ে আসা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সাথ আলাপকালে তিনি আজ এ কথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, রংপুরের আলোচিত আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়া হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলাসহ উত্তরা, যাত্রাবাড়ীর নির্মম হত্যাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচারের জন্য নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে যে, কত দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা যায় তার ওপর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমের কার্যক্রম চলমান থাকলেও ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি না থাকায় বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার গত ১৩ জুলাই অবসরে যান। অন্য এক সদস্য বিচারপতি হাইকোর্টে ফিরে গেছেন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে কোনো বিচারপতি নেই। তবে শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনে আশা প্রকাশ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও চার আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এডভোকেট তাজুল ইসলাম এটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বাকি চার প্রসিকিউটরের মধ্যে মো. মিজানুল ইসলাম অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সহকারী এটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পাবেন।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর সেকশন ৭ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর থাকবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বরর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।
টানা ৩৬ দিনের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় সরকারি হিসেবেই আট শতাধিক নিহত হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে বহু মানুষ। এখনো চিকিৎসাধীন কয়েক হাজার মানুষ। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। স্কাইপি কেলেঙ্কারি, সাক্ষী গুম ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার নানা অভিযোগ সত্ত্বেও এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
ট্রাইবুনালের রায়ের পর আনা আপিল নিষ্পত্তি শেষে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এখন এই ট্রাইব্যুনালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই আগস্ট গণহত্যার বিচার হবে।
চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধ পরিকর।
Leave a Reply