বশির আল–মামুন চট্টগ্রাম : দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ কার্যালয় থেকে ফজলে করিমকে আদালতে তোলা হয়।
আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জাকের হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর হত্যাচেষ্টা মামলায় এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
পুলিশ জানায়, রাউজানে মুনিরীয়া যুব তাবলিগ কমিটির দলইনগর-নোয়াজিষপুর শাখায় (এবাদতখানা) ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলার এক নম্বর আসামি ফজলে করিম চৌধুরীর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত ২৩ আগস্ট সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী, তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরীসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন মুনিরীয়া যুব তাবলিগ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ আলাউদ্দিন।
এ পর্যন্ত ফজলে করিমকে নগরের পাঁচলাইশ, চকবাজার ও চান্দগাঁও থানার তিনটি মামলা এবং রাউজান থানার দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয় ফজলে করিমকে।
তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন থেকে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় সেনা কর্মকর্তা নির্জন হত্যার ঘটনায় ২৫ জন কে আসামী করে ২ মামলা
বশির আল–মামুন চট্টগ্রাম ব্যুরো : কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজীম ছারোয়ার নির্জন হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলাতেই ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে পুলিশ সদস্য ও সেনা সদস্য বাদী হয়ে পৃথক আইনে মামলা দুইটি করেন বলে জানান চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া।
এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ফাঁসিয়াখালী ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল্লাহ আল হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় একটি এবং পুলিশের এসআই আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে অপর মামলাটি করেছেন।
ওসি মঞ্জুর কাদের বলেন, মামলা দুইটিতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আট জনকে। এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
তারা হলেন, মো. বাবুল প্রকাশ বাবুল ডাকাত (৪৪), মো. হেলাল উদ্দিন (৩৪), মো. আরিফ উল্লাহ (২৫), মো. আনোয়ার হাকিম (২৮), মো. জিয়াবুল করিম (৪৫), মো. হোসেন (৩৯)। তাদের সবার বাড়ি চকরিয়া উপজেলায়।
এই ছয়জনের মধ্যে বাবুল প্রকাশ লেফটেন্যান্ট তানজিমকে ছুরিকাঘাত করার প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছিল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এর আগে গত সোমবার রাত ৩টার দিকে ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় অভিযানের সময় ডাকাতের ছুরিতে মারা যান লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন।
আইএসপিআর জানিয়েছিল, রাতে পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর আসে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা সেখানে পৌঁছান।
অভিযানের সময় ৭-৮ সদস্যের ডাকাত দলটির কয়েকজনকে তাড়া করেন লেফটেন্যান্ট নির্জন। এ সময় ডাকাতরা নির্জনের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযানের সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রেজাউল করিমের বাড়ি ও আশপাশ থেকে ছয় জন ডাকাতকে আটক করে। এছাড়া ২টি দেশিয় আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন ধরনের ১১ রাউন্ড গুলি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, একটি পিকআপ এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী নির্জন পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মিলিটারি একাডেমি থেকে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে কমিশন লাভ করেন।
ওসি মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, গ্রেপ্তার ছয় আসামিকে বুধবার রাতে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করেছে। এজাহারভূক্ত অন্য আসামি ও অজ্ঞাতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রামে এতিমখানার নামে ভুয়া আবেদন করে চাল আত্মসাৎ ; একজন আটক
বশির আল–মামুন চট্টগ্রাম : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভুয়া আবেদন করে চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইলিয়াছ শরিফ (৩২) নামে প্রতারকচক্রের এক সদস্যকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আটক করে মীরসরাই থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ইলিয়াস উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামের মৃত ইউসুফ শরিফের ছেলে।
মীরসরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসের অফিস সহকারী সোহাগ আহমেদ বলেন, ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের মাধ্যমে মীরসরাই উপজেলার ১৫টি হেফজখানা ও এতিমখানা মাদ্রাসার জন্য ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ওই ১৫টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিল। পরে চাল বরাদ্দ আসলে আমি আবেদন করা নম্বরে কল দিই। সে অনুযায়ী মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে তা উত্তোলন করে নিয়ে যান।
‘মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মুমিন (রা.) মহিলা এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আনোয়ার হোসেন অফিসে এসে অভিযোগ করেন, তার মাদ্রাসার নামে বরাদ্দ এক টন চাল তিনি পাননি। এটি শোনার পর চাল উত্তোলনকারী ইলিয়াছ শরিফকে কল দিয়ে অফিসে আসতে বলি। তিনি সন্ধ্যায় অফিসে আসলে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর প্রতারণার মাধ্যমে চাল উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করার বিষয়টি স্বীকার করেন।’
পিআইও আরও বলেন, ‘চাউল বরাদ্দ হওয়া আরও কয়েকটি মাদ্রাসার নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেগুলোও বন্ধ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি আরও কয়েকটি মাদ্রাসার নামে বরাদ্দ চাল উত্তোলন করে ফেলেছে। সবগুলো আবেদন নতুন করে তদন্ত করা হবে। প্রতারক ইলিয়াছ শরিফকে মীরসরাই থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) মীরসরাই উপজেলা সভাপতি ও ছকিনা আয়েশা মহিলা মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা জমির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতারক চক্রটি কৌশলে আমাদের মাদ্রাসার নামেও ভুয়া আবেদন করে বরাদ্দ এক টন চাল আত্মসাৎ করে ফেলেছে। বিষয়টি জানার পর আমি উপজেলা পিআইও অফিসে যোগাযোগ করেছি। এ ঘটনায় জড়িত ইলিয়াছ শরিফ নামে এক প্রতারককে আটক করে মীরসরাই থানায় সোপর্দ করা হলেও তার নামে মামলা না করে চাল আত্মসাতের বিষয়টিকে দফারফা করার চেষ্টা চলছে বলে শুনেছি। উপজেলার ১৫টি মাদ্রাসার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কয়টি চাল বরাদ্দ পেয়েছে তা উদ্ঘাটনের পাশাপাশি প্রতারক চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি আবদুল কাদের বলেন, ‘প্রতারণা করে চাল আত্মসাতে জড়িত ইলিয়াছ শরিফ নামে একজনকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘এ ঘটনায় পিআইও অফিসের অফিস সহকারীকে বাদী করে নিয়মিত মামলা করার জন্য বলা হয়েছে৷’ প্রতারণা করে চাল আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply