24 Nov 2024, 05:35 pm

পশ্চিমা মিডিয়ার মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিয়েছেন আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনী বা আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়ানি একটি পাবলিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র তেহরান টাইমস জেনারেল কায়ানি সম্পর্কে সংবাদে পশ্চিমা মিডিয়ার আচরণ বিশ্লেষণ করে একটি নিবন্ধে লিখেছে,  নিরপেক্ষতা এবং সততা বজায় রাখা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রধান স্তম্ভ বা অন্তত তাই বলা হয়। যাইহোক পশ্চিমা মিডিয়াতে ইসরাইলি যুদ্ধবাজ শাসক গোষ্ঠীর প্রতি  প্রকাশ্য পক্ষপাতিত্ব এবং তার স্বার্থের প্রতি যেকোনো মূল্যে প্রশ্নাতীত প্রতিশ্রুতি আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান।

মানবতার বিরুদ্ধে অকল্পনীয় কাজ করে এমন একটি নিপীড়ক শাসক গোষ্ঠীর মুখ রক্ষা করতে পশ্চিমা মিডিয়া সক্রিয়ভাবে উঠে পড়ে লেগেছে।  এই লজ্জাজনক প্রবণতা, যা একসময় অন্তত সাংবাদিকতার নৈতিকতার পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ ছিল এখন তা সংবাদের সম্পূর্ণ মিথ্যাচারে পরিণত হয়েছে। এমনকি নির্লজ্জ এবং বারবার মিথ্যা এড়ানোর সরল নীতি গত বছরে পরিত্যাগ করা হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবর থেকে ইন্টারনেটে হামাস, ফিলিস্তিনি, লেবাননি এবং এমনকি ইরানীদের সম্পর্কে জাল গল্পে পূর্ণ। এই বানোয়াট গল্পগুলোর মধ্যে হামাসের দ্বারা ইসরাইলি শিশুদের শিরচ্ছেদ, আল-আরাবি আল-আহলি হাসপাতালে বোমা হামলা এবং বেসামরিক স্থানগুলোকে প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার মতো ভয়ঙ্কর দাবি রয়েছে। কিন্তু এমনকি এই কুখ্যাত গল্পগুলো ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর  কুদস ফোর্সের কমান্ডারের অবস্থান এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভাইরাল হওয়া হাস্যকর দাবিগুলোর তুলনায় যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হতে পারে।

প্রথমে, রিপোর্ট করা হয়েছিল যে জেনারেল ইসমাইল কায়ানি বৈরুতের দক্ষিণে একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হন। আইআরজিসি নিশ্চিত করেছে যে তাদের একজন সিনিয়র কমান্ডার সর্দার নীলফ্রোশানও এই হামলায় শহীদ হয়েছেন।

ইসরাইলি হামলায় নিহতদের লাশ শনাক্ত হওয়ার পর পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো নতুন করে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। তারা দাবি করেছে, এই হামলায় সরদার কায়ানি গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গেছেন। এরপর ভুয়া খবর ছড়ানো হয় যে কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির বিমানে তেহরানে ফিরে এসেছেন, যিনি বৈরুতে একটি সংক্ষিপ্ত সফর করেছিলেন।

যখন আইআরজিসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অবশেষে কায়ানির স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুজবগুলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং স্পষ্টভাবে তার শাহাদাত বা আহত হওয়ার বিষয়টাকে অস্বীকার করেন তখন পশ্চিমা মিডিয়া আরেকটি মিথ্যা বানোয়াট গল্প প্রচার করা শুরু করে। এবার, কাল্পনিক গল্পটি নিউজ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট আই থেকে এসেছে যেটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট যা কাতারি সরকার দ্বারা স্পনসর করা হয়েছে।

প্রতিরোধের প্রতি তার বৈরী অবস্থানের জন্য পরিচিত একজন ইরাকি সাংবাদিক গত ৯ অক্টোবর রিপোর্ট করেছেন যে তেহরান, বৈরুত এবং বাগদাদের দশটি সূত্র বলেছে যে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় গোয়েন্দা লঙ্ঘনে তার ভূমিকার কারণে কায়ানি জিজ্ঞাসাবাদের কবলে পড়েছেন।

অন্যান্য মিডিয়াও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে দাবি করেছে যে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জেনারেল কায়ানির নাকি “হার্ট অ্যাটাক” হয়েছে। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে যে কমান্ডার নিহত আহত এবং গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে তিনি মঙ্গলবার একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে হাজির হন।

কায়ানি আইআরজিসি এবং অন্যান্য ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে শহীদ নীলফ্রোশানের দাফন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন এবং তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ ও শান্ত দেখাচ্ছিল। তাকে প্রার্থনা করতে এবং অন্যান্য দর্শকদের সাথে কথা বলতে দেখা গেছে এবং সাম্প্রতিক দিনগুলিতে পশ্চিমা মিডিয়ার সমস্ত দাবি এর মাধ্যমে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

পশ্চিমা মিডিয়া কি করে? : জেনারেল কায়ানি তার পূর্বসূরি শহীদ সোলেইমানির মতো জনসমক্ষে কম দৃশ্যমান এবং মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ না করার জন্য পরিচিত। তার মতো লোকদের সাধারণত কেবলমাত্র সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যায় যেখানে ইরানের সব স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। সুতরাং এটি শুরু থেকেই হাস্যকর ছিল যে পশ্চিমা মিডিয়া তার “জনগণের দৃষ্টি থেকে দীর্ঘ অনুপস্থিতি” হাইলাইট করে তার অবস্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিল।

পশ্চিম এশিয়ার বিশেষজ্ঞ সাইদ রেজা সদর আল-হোসেইনি বলেছেন, “আমি মনে করি যে প্রতিরোধ শক্তির মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা করার পাশাপাশি পশ্চিমা মিডিয়া ইসরাইলি ও আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায কায়ানির অবস্থান ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছে। কারণ কুদসের প্রতিরোধ বাহিনীর কমান্ডারদের তথ্য সংগ্রহ করা খুবই কঠিন।

এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছিলেন যে গুপ্তচর সংস্থাগুলোর সাথে এই ধরনের ঘনিষ্ঠ এবং বারবার সহযোগিতা পশ্চিমা মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা অপরিবর্তনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা দ্রুত কমে যাচ্ছে।  রয়টার্স এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো মিডিয়া আউটলেটগুলো একসময় তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসাবে বিবেচিত হতো এখন সত্যকে বিকৃত করার চলমান প্রবণতার কারণে সেগুলো এখন ক্রমবর্ধমান সন্দেহের সম্মুখীন হচ্ছে৷ বেশি সংখ্যক লোক তথ্যের বিকল্প উৎসের সন্ধান করার কারণে তাদের বর্ণনাগুলোকে অন্ধভাবে গ্রহণ করার দিন ফুরিয়ে এসেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 13859
  • Total Visits: 1293648
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৫:৩৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018