বশির আল–মামুন চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সেক্রেটারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুকের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে দিন দিন।
ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম,দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারীতা ও চেম্বারের টাকা আত্বসাৎ সহ নানা অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবী করে আসছে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন । দিন যতই যাচ্ছে আন্দোলন ততই জোরালো হচ্ছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকেই এ আন্দোলনের ডাক দেন ওই সংঠনের ৫২ জন সদস্য ও চেম্বারের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। এতে করে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সবচেয় বড় এ প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে চরম অচলাবস্থা।
সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের তরফ থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আনোয়ার পাশাকে চেম্বারের বর্তমান প্রশাসক নিয়োগ করলেও প্রতিষ্টানে কাজের গতি ফিরছেনা। এসোসিয়েশনের একটাই দাবী সেক্রেটারি ফারুক কে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
জানা যায় চিটাগাং চেম্বার অফ কমার্সের মালিকানাধীন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ২০০৮ সালের ১০ এপ্রিল আবাসিক ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) পদে ২৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরিতে যোগদান করেন মোহাম্মদ ফারুক। ৯ বছরের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি চিটাগাং চেম্বারের সেক্রেটারি ইনচার্জ এর দায়িত্ব পান। সেক্রেটারির চেয়ারে বসার পর ফুলেফেঁপে উঠে তার সম্পদ।
এর পর শুরু হয় তার সম্পদ গড়ার প্রতিযোগীতা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ চেম্বারের বিভিন্ন কাজ কর্মের মোটা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তিনি উত্তর কাট্টলী, রাউজান, সীতাকুন্ড এলাকায় জমি-প্লট কিনেছেন প্রায় ৩ কোটি টাকার, সঞ্চয়পত্র কিনেছেন প্রায় ১ কোটি টাকার, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ১ কোটি টাকা, বানিয়েছেন কোটি টাকা দামের আলিশান বাড়ি। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। চিটাগাং চেম্বারের এই কর্মকর্তার অতি দ্রুত সম্পদশালী হওয়ার ঘটনা রীতিমতো অবিশ্বাস্য।
আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও তার আর্শীবাদে চিটাগাং চেম্বারকে দীর্ঘ ১৬ বছর কব্জায় রেখে বদলে যায় প্রকৌশলী ফারুকের ভাগ্য। এম এ লতিফের ছত্রছায়ায় ও যোগসাজসে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ‘হরিলুট’ করে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন নেতাদের। ২৪ হাজার থেকে শুরু করে লাফিয়ে লাফিয়ে ফারুকের বেতন বেড়েছে বর্তমানে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৭ টাকা। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে থেকে রহস্যজনক ভাবে এ পরিমান টাকা বেতন নিচ্ছেন।
চেম্বারের কর্মকর্তারা জানান, চিটাগাং চেম্বারের ইতিহাসে ফারুকের আগে কোনো সেক্রেটারি এতো উচ্চ বেতন পাননি। ফারুকের আগে চেম্বারের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করা ওসমান গনি চৌধুরী বেতন পেতেন ৩০ হাজার টাকা। এমনকি এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সেক্রেটারি জেনারেলও ফারুকের মতো মোটা অঙ্কের বেতন পান না। কী কারণে ফারুকের বেতন দফায় দফায় বাড়িয়ে আড়াই লাখের ওপরে উন্নীত করা হয়েছে তা নিয়ে চেম্বারের কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলছেন।
এদিকে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর সহ সভাপতি মো. আইয়ুব খান ও সেক্রেটারী এসএম আলমগীর হোসেন জানান, ফারুক অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। ২০১২ সালের দিকে তিনি তৎকালীন সংসদ সদস্য ও চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে চেম্বারে তার বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন হয়ে উঠেন তিনি। এ কারণে ফারুকের বেতন অবিশ্বাস্য অঙ্কে বাড়তে থাকে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রশাসক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো আনোয়ার পাশার সাথে মুঠো ফোনে যোগোযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে কিছুটা সমস্যা আছে বলে জানান।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ফারুকের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
Leave a Reply