অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসরাইলের বিরুদ্ধে অপারেশন ট্রু প্রমিজ বা ‘সত্য প্রতিশ্রুতি-এক’ শীর্ষক অভিযানে ইরান একই সময়ে ব্যবহার করেছিল ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন যাতে অত্যাধুনিক ইসরাইলি, মার্কিন ও ইউরোপীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর বাস্তব শক্তি কতটা তা বোঝা যায়।
এরপর ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সত্য প্রতিশ্রুতি-দুই’ শীর্ষক অভিযানে ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে সেসবের শতকরা ৯০ ভাগই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সত্য প্রতিশ্রুতি-তিন’ শীর্ষক অভিযানে ইরান সম্ভবত নতুন কিছু কৌশল ও হাতিয়ার প্রয়োগ করবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি সম্প্রতি বলেছেন যে ইসরাইল বহু চেষ্টা করে এসেছে ইরানকে ও আরও অনেক পক্ষকে একটি যুদ্ধে জড়িত করতে, কিন্তু ইরান কোনো যুদ্ধে না জড়িয়ে হামলার জবাবে হামলার করার কৌশল গ্রহণ করেছে এবং এরই আলোকে ইরানের ওপর সর্বশেষ ইসরাইলি হামলার জবাব দেয়ার অধিকার তেহরানের রয়েছে। ইরান আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বৈধ জবাব হিসেবে অবশ্যই ইসরাইলে হামলা চালাবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ইসরাইলে ইরানের হামলা অবধারিত তথা অনিবার্য, কিন্তু কখন ও কিভাবে এই হামলা চালানো হবে তা ঠিক করা হবে পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে। আমরা তাড়াহুড়াও করব না আবার বিলম্বও করব না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন ইরানের প্রতিটি হামলাই হবে পরিকল্পনা, কৌশল ও হাতিয়ার প্রয়োগের দিক থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও ভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যে ভরপুর।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের প্রথম অভিযানটিতে তেহরান একই সময়ে ব্যবহার করেছিল ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন যাতে অত্যাধুনিক ইসরাইলি, মার্কিন ও ইউরোপীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর বাস্তব শক্তি কতটা তা বোঝা যায়। ইসরাইল এইসব প্রতিরক্ষা সিস্টেম সংগ্রহ করেছে ২০০৬ সালের ৩৩ দিনের যুদ্ধ অবসানের পর বিপুল অর্থ ব্যয় করে যাতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয় অত্যন্ত জোরালো। প্রথম ওই অভিযানে ইরানের বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি প্রতিরক্ষা-ব্যূহ ভেদ করে লক্ষ্যস্থলগুলোতে আঘাত হেনেছে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযানে ইরান কেবল উন্নতমানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ছিল হাইপারসনিক ফাত্তাহ ও ফলাফল ছিল অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে সফল। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইরানের নিক্ষেপ-করা ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র অধিকৃত ফিলিস্তিনে তথা ইসরাইলের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আঘাত হানে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। ফলে ইসরাইলের ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অকার্যকারিতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ইসরাইল ‘থাড’ নাম
ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সত্য প্রতিশ্রুতি-তিন’ শীর্ষক অভিযানে ইরান হয়ত ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ নানা অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে হামলা চালাবে, যেমন ইসরাইলি শহরগুলোর নানা অবকাঠামো, গ্যাস ও তেল-ক্ষেত্র, পানি-সম্পদ কেন্দ্র। আর এসব হামলা ইসরাইলের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। ইসরাইলে ইরানের অতীত হামলাগুলো ছিল কেবল সামরিক লক্ষ্যগুলোতে কেন্দ্রীভূত।
ইরান অতীতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্বাদ্র, ইমাদ ও ফাত্তাহ’র মত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করলেও খুররমশাহর ও সিজ্জিল-এর মত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করেনি। এইসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি যা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ইসরাইলি হঠকারিতার মোকাবেলায় ট্রাম্প কার্ড হতে পারে। এমনকি ইরান যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সত্য প্রতিশ্রুতি-দুই’ শীর্ষক অভিযানের মত অভিযানেরও পুনরাবৃত্তি করে কেবল লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেটগুলোর তালিকায় পরিবর্তন এনে তাহলেও ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েক গুণ।
আসলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সত্য প্রতিশ্রুতি-এক ও দুই’ শীর্ষক অভিযানগুলো গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ইসরাইলি হুমকির মোকাবেলায় ইরানের শক্তি-প্রদর্শনের মাধ্যম। ইসরাইলে সম্ভাব্য নতুন ইরানি হামলার রূপরেখা অস্পষ্ট হলেও এটা স্পষ্ট যে এতে নতুন নতুন কৌশল ও হাতিয়ার ব্যবহার করা হবে যাতে ইসরাইলের উচ্চ পর্যায়ের হঠকারী মানসিকতার অসারতা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা যায়।
Leave a Reply