এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ডাকবাংলা বাজারের “ডাকবাংলা নার্সিং হোম অ্যান্ড নূর জাহান ডায়াগনষ্টকি
সেন্টারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। নিহত প্রসূতি রোকসানা (২৫) উপজেলার ১নং সাধুহাটি ইউনিয়নের সাধুহাটি এলাকার সল্টু মিয়ার মেয়ে।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রোকসানাকে সিজারের জন্য ডাকবাংলা নার্সিং হোম অ্যান্ড নূর জাহান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়া হয়। যাকে বলা হয় কাজলের ক্লিনিক। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। অপারেশনের কয়েক ঘন্টা পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোকসানার অবস্থা ভালো নেই বলে জানান। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঝিানইদহ সদর হাসপাতালে নেয়ার কথা বলেন তারা। কিন্ত ঐ হাসপাতালেই রোকসানা মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত রোকসনাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠায়। এঘটনা ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগীদের সাথে চার লক্ষ বিশ হাজার টাকা রফাদফার মাধ্যমে মিমাংসা করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ঐ ক্লিনিকে এমন ঘটনা এর পূর্বেও ঘটেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
রোকসানার ছোট ভাই শিহাব ও বোন লিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় সিজারের জন্য ডাকবাংলা নার্সিং হোম অ্যান্ড নূর জাহান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ( কাজলের ক্লিনিক) গেলে তারা সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই তাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে যান এবং অপারেশন করেন। অপারেশনের প্রায় ১ ঘন্টা পর তাকে বেডে নিয়ে আসে। বেডে রাখার পরপরই তার খিচুনি উঠে এবং শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। একপর্যায়ে ক্লিনিকের ডাক্তারকে ডাকলে তিনি একটা কি যেন ইনজেকশন তার শরীরে পুশ করেন এবং ডাক্তার বলতে থাকেন এটা খুব ভালো ইনজেকশন। তার পরপর আমার বোনকে ঘাড় নেতিয়ে ফেলতে দেখে আমারা চিল্লাতে থাকি। আর ডাক্তারসহ ক্লিনিকের নার্সরা হাসপাতালের জানালার গ্লাস গুলো লাগাতে থাকে। আর বলতে থাকে রোকসানা ভালো আছে। তাকে সদর হাসপাতালে নিতে হবে। তারাই অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে আমার বড় বোন মৃত রোকসানাকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে ঝিনাইদহ পাঠায়।
এবিষয়ে মৃত রোকসানার স্বামী শিমুল বলেন- আমার স্ত্রীকে তারা হত্যা করেছে। আামার দুই ছেলে। বড় ছেলে ইয়াসিন ইসলাম ইসাত তার বয়স প্রায় আট বছর আর একজনের বয়স দুই দিন। এখন আমি কি করবো। সুতরাং তাদের শাস্তি চাই।
এবিষয়ে ডাকবাংলা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ( কাজলের ক্লিনিক) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সজল এর কাছে (০১৯২৫৫৫৬০৭০) একাধিক বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
এবিষয়ে অপারেশনের ডাক্তার রাকিবুল হাসান বলেন- রুগি মারা গেছে শুনেছি। কিন্তু এটা পোস্ট অপারেটিভ কোন ঝামেলায় হয়তোবা মারা গেছে। -এ্যানেস্থাসিয়ায় কোন সমস্যা ছিল না। এ্যানেস্থাসিয়া করেছিলেন ডাঃ আনিচ। তারা কোথাও চাকরি করেন কিনা জানতে চাইলে বলেন,কোথাও চাকরি করেন না তারা। এভাবে তাদের একটা গ্রুপ আছে তারা প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে এ অপারেশন গুলো করেন।
এবিষয়ে ডাকবাংলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আঃ রহমান কামাল বলেন- বিষয়টি সকালে শুনেছি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য
ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় ক্যাম্পের এসআই, টু এসআইসহ ভুক্তভোগীদের নিয়ে চার লক্ষ বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে মিমাংসা করা হয়েছে। নগদ সত্তর হাজার আর এক মাসের সময় নিয়ে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
এবিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন হাদী জিয়া উদ্দিন বলেন – আমি ছুটিতে আছি। আগামীকাল রবিবার তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply